জার্মানির নতুন নেতা মের্ৎস, রক্ষণশীল জোটের বড় জয়

জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফ্রেডরিক মের্ৎসের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল জোট জয়লাভ করেছে, যা দেশটির রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কট্টর ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে, আর বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি) তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হলেও, মের্ৎসের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) যৌথভাবে ২৮.৫% ভোট পেয়েছে, যা অন্য দলগুলোর তুলনায় এগিয়ে। নির্বাচনী জয় নিশ্চিত হলে মের্ৎস জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হবেন এবং ইস্টারের মধ্যেই নতুন সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছেন।

মের্ৎসের প্রতিক্রিয়া
জয়ের পর মের্ৎস বলেন, “বিশ্ব আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে না, তাই দ্রুত কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে হবে। জার্মানিকে আবারও দৃঢ় নেতৃত্বের অধিকারী করতে হবে।”

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও ইউরোপের ভবিষ্যৎ
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডানপন্থী উত্থানকে স্বাগত জানিয়ে একে “জার্মানির জন্য দারুণ দিন” বলে মন্তব্য করেছেন। তবে মের্ৎস ট্রাম্পের ইউক্রেন-সংক্রান্ত মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, “ইউরোপকে শক্তিশালী করতে হবে, যেন মার্কিন নির্ভরশীলতা কমানো যায়।”

এএফডির রেকর্ড ভোট
কট্টর ডানপন্থী দল এএফডি ২০.৮% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে, যা ইউরোপীয় রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছে। দলটির চ্যান্সেলর প্রার্থী অ্যালিস ওয়াইডেল এই ফলাফলকে “ঐতিহাসিক সাফল্য” বলে উল্লেখ করেছেন এবং রক্ষণশীলদের সঙ্গে জোট গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে মের্ৎস এই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করেছেন।

ছোট দলগুলোর অবস্থান
এবারের নির্বাচনে বামপন্থী দ্য লেফট পার্টি ৮.৮% ভোট পেলেও ফ্রি ডেমোক্র্যাটস (এফডিপি) ও সাহরা ওয়াগেনকনেখট অ্যালায়েন্স (বিএসডব্লিউ) পার্লামেন্টে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচ শতাংশ ভোট পায়নি। ফলে মের্ৎসের সামনে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সীমিত বিকল্প থাকছে।

ইউরোপের জন্য চ্যালেঞ্জ
মের্ৎস এমন এক সময়ে ক্ষমতায় আসছেন, যখন ইউরোপ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মের্ৎসের নেতৃত্বে জার্মানির নীতিগত পরিবর্তন ইউরোপ ও বিশ্ব রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

ওলাফ শলৎসের প্রতিক্রিয়া
পরাজিত চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস নির্বাচনী ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বলেছেন, “কট্টর ডানপন্থী দল এভাবে ভোট পেলে তা কখনোই স্বাভাবিক বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”

সরকার গঠনের প্রক্রিয়া
বুন্দেসটাগের ৬৩০টি আসনের জন্য ভোট হয়েছে, যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে বণ্টন করা হবে। এবারের নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের সাত মাস আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছে, কারণ গত বছর শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভেঙে গিয়েছিল।

(তথ্যসূত্র: পলিটিকো, রয়টার্স)