মঙ্গলবার, ১১ই মার্চ, ২০২৫| ভোর ৫:৪৩

জাবিতে ‘ভারতীয় অর্থায়নে’ ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও উত্তেজনা

প্রতিবেদক
staffreporter
নভেম্বর ২৬, ২০২৪ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জাবিতে ‘ভারতীয় অর্থায়নে’ ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও উত্তেজনা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও চারটি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম একে অপরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গেল। এই চার প্ল্যাটফর্মের মধ্যে রয়েছে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ এবং শহিদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় চারপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির সমর্থনে সেখানে অবস্থান নেন, যা ছিল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি আদায়ের লক্ষ্যে। এর প্রতিবাদে, আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ সেখানে মিছিল নিয়ে হাজির হয়। তাদের সঙ্গেই রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা মিছিল সহ উপস্থিত হন।
এ সময় তারা বেশ কিছু স্লোগান দিতে থাকেন, যেমন ‘ভারতীয় আগ্রাসন, মানি না মানব না’, ‘দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ চলবে না’, ‘মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া ভবন নির্মাণ হবে না’, ‘আবাসিক হলের সামনে, ভবন নির্মাণ হবে না’ ইত্যাদি।


আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের নেতারা জানান, তারা সবসময়ই আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাদের দাবি, প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তাই ভারতীয় অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভবন নির্মাণ হতে পারে না। তারা আরও বলেন, “ভবন নির্মাণে আমাদের দেশের অর্থায়ন হতে হবে, অন্যথায় আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবো।”


গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, প্রকল্প পরিচালক ময়েজ উদ্দিন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে আঁতাত করে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে এই নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন। তারা বলেন, “প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে ভবন নির্মাণের বিষয়টি অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইমন বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এতগুলো গাছ কেটে ভবন নির্মাণ শুরু করাটা অত্যন্ত অযৌক্তিক। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”
শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা চারুকলা ভবন বা অন্য কোনো বিভাগের বিরুদ্ধে নই, তবে আমাদের আবাসিক হলের পাশের কোনো একাডেমিক ভবন নির্মাণ হতে দেবো না। আমাদের হলের পাশের মাঠটি কোলাহলে পরিণত হলে, পড়াশোনার পরিবেশ ভেঙে যাবে। তাই কোনোভাবেই এখানে একাডেমিক ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যাবে না।”


এর আগে, দুপুর ১২টা থেকে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রেখেছিলেন, তাদের দাবি ছিল দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর অনুমতি প্রদান। এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন।


পরে রাত ৯টা পার হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে না নিলে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সেখানে এসে উপস্থিত হন। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্য আহ্বান জানান।
এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আগামী ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আমরা একটি সভা আয়োজন করব, যেখানে সব পক্ষের মতামত শোনা হবে এবং সেই অনুযায়ী যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।”

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ