সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| বিকাল ৫:২৬

জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠি পেলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫ ১:১৭ অপরাহ্ণ
জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠি পেলেন প্রধান উপদেষ্টা

জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠি পেলেন প্রধান উপদেষ্টা

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার শেখ হাসিনাকে দেশের সব হত্যাকাণ্ডের “মাস্টারমাইন্ড” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, এই খুনি মাস্টারমাইন্ডকে রাজনীতিতে ফেরানোর জন্য যারা চেষ্টা করছেন, তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই। তিনি আরও দাবি করেন, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবিতে ‘গণহত্যার ন্যায় বিচার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি হাসিনার শাসনামলে ঘটে যাওয়া গুম, খুন এবং নির্যাতনের নানা ঘটনা তুলে ধরেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন হাসিনার শাসনামলে গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিজ-এর প্রধান নির্বাহী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গোলাম পরওয়ার তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডব, ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে বিচারিক হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা, আল্লামা সাঈদীর রায়ের পর গণহত্যা, ২০১৩ সালের গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা, এবং ক্রসফায়ারে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের পিছনে শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল।

তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা এত নিষ্ঠুর এবং ফ্যাসিস্ট, যে তার জন্য ‘ফ্যাসিস্ট’ শব্দটি যথেষ্ট নয়। তাকে আমি ‘স্যাডিস্ট’ বলি, কারণ খুন, গুম এবং রক্তপাত দেখে যার পাষাণ হৃদয় একটুও কাপে না, বরং উপভোগ করে, তাকে ইংরেজিতে স্যাডিস্ট বলা হয়।”

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে যত গুম, খুন এবং নির্যাতন হয়েছে, তা সকলের সামনে আনা উচিত এবং এর বিচার করা প্রয়োজন। তিনি আরও দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যারা ফ্যাসিবাদের সহযোগী, তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং প্রতিটি সেক্টরে সংস্কার করে তারপর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসির বলেন, “আমরা ২০০৬ সাল থেকে গুম, খুন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার চাইতে এখানে সমবেত হয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিজ একটি নির্দলীয় প্রতিষ্ঠান এবং আমরা এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর বিচার দাবি করছি।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, শামীম সাঈদী, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, আমজনতার দলের সদস্য সচিব তারেক রহমান, শহীদ মেজর তানভীরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা, মেজর রেজাউল করিম, মেজর ফিরোজ ইফতেখার ফুয়াদ, লেঃ কর্নেল হাসিনুর রহমান (বীর প্রতীক), এবং গুম ফেরত মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।

Zakaria, 12:40 PM
সংশোধন হচ্ছে আইন – শুধু রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই মুক্তিযোদ্ধা, বাকিরা সহযোগী

১৯৭১ সালে যারা সরাসরি রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, তারাই কেবল ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। অন্যদিকে, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন, বিশ্বজনমত গঠনে কাজ করেছেন কিংবা কূটনৈতিক সহায়তা অর্জনে ভূমিকা রেখেছেন, তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে গণ্য হবেন।

বর্তমান আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত এমন আট ধরনের পেশাজীবী ও ব্যক্তি, যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি, তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এই সংজ্ঞা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২’ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এ নিয়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের প্রথম সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।

বর্তমানে দেশে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৯১ হাজার ৯৯৮ জন। তবে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৬ জন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা সংশোধন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘যারা রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, তাদের মর্যাদা রক্ষায় এবং সহযোগীদের আলাদা স্বীকৃতি দিতে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যুদ্ধকালীন সংগঠক, বিদেশে জনমত গঠনে কাজ করা ব্যক্তি, মুজিবনগর সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।’’

বর্তমান আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর যেসব ব্যক্তি দেশের অভ্যন্তরে থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু নতুন খসড়া অধ্যাদেশে এই সংজ্ঞা সংশোধন করা হচ্ছে।

খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুধুমাত্র রণাঙ্গনে সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, এমন ব্যক্তিরাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। অন্যদিকে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী, বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনকারীরা, মুজিবনগর সরকারের সদস্য ও কর্মকর্তারা, এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকরা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। তবে নির্যাতিতা বীরাঙ্গনা এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া চিকিৎসক ও নার্সরা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন।

ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের মূল দাবি হলো, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, শুধু তারাই মুক্তিযোদ্ধা হবেন। ভাতা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কারও আপত্তি নেই, কিন্তু মর্যাদার প্রশ্নে তারা স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।’’

আগামী বৃহস্পতিবার জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) সভায় খসড়া অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। আশা করা হচ্ছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহেই এটি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা যাবে।

এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা নিয়ে চলমান মামলার নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে ১৯৭১ সালে বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস হতে হয়। আদালত এই বয়সসীমা বহাল রাখলে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করতে হলে অজু করবেন: বরকত উল্লাহ বুলু

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করতে হলে আগে অজু করতে হবে। তিনি বলেন, তারেক রহমান শুধু বিএনপির চেয়ারপারসনের ছেলে নন, বরং তিনি শহিদ জিয়ার প্রকৃত উত্তরসূরি ও বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বুলু বলেন, সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছেন, শহিদ প্রেসিডেন্টের ছেলে হলেই কি নেতা হতে পারবেন? তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট বলতে চাই, শহিদ জিয়ার উত্তরসূরি তারেক রহমান। তার নেতৃত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। আপনারা নাবালক উপদেষ্টা ও নেতারা বিভ্রান্তিকর কথা বলে দেশকে বিভক্ত করবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান আড়াই বছর আগে ৩১ দফা দিয়েছেন। যদি কোনো সংযোজন বা সংশোধন দরকার হয়, তাহলে সেটা করা যেতে পারে। তবে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে না, বরং যারা আন্দোলন-সংগ্রামে পাশে ছিল, তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।’

শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বুলু। তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে ২৭ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই টাকা ফেরত আনতে হলে ঐতিহাসিকভাবে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে, যেমনটা শহিদ জিয়াউর রহমান করেছিলেন।’

বিএনপি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আপনারা ১৭ বছর ধরে সংগ্রাম করেছেন। বাবার জমি বেচেছেন, মায়ের গয়না বেচেছেন, তবু বিএনপির পতাকা উঁচিয়ে রেখেছেন। হঠাৎ ধনী হওয়ার লোভে কেউ যেন দলের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে। যারা দলের আদর্শের বাইরে কাজ করবে, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদেও থাকার অধিকার নেই।’

তিনি অভিযোগ করেন, কিছু বিএনপি নেতা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগপ্রীতিতে মুগ্ধ হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ বিএনপিতে আসতে চায়, আসতে পারে, তবে পাঁচ-ছয় বছর পেছনের কাতারে বসে থাকতে হবে। যারা ১৭ বছর সংগ্রাম করেছেন, তারাই নেতা হবেন।’

শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘গত ১৭ বছর আমাদের ওপর শেখ হাসিনা যে জুলুম করেছেন, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, আমরা বাসায় থাকতে পারিনি, আমাদের ঠিকানা ছিল ফ্ল্যাটের বারান্দা। তবে এই নিপীড়নই বিএনপিকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলে পরিণত করেছে।’

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ।

১০

ভোরে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোরে পুলিশের টহল কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়ে স্থাপিত চেকপোস্ট, তল্লাশি চৌকি এবং থানা ঘুরে তিনি বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের খোঁজখবর নেন।

পরিদর্শনের রুট ও কার্যক্রম

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ফয়সল হাসান জানান, উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভোরে বারিধারার ডিওএইচএস-এর বাসা থেকে বের হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যান। তিনি বনানী মোড়, বিজয় সরণি (নভোথিয়েটার), মানিক মিয়া এভিনিউ, কলাবাগান, ইডেন কলেজ হয়ে নিউমার্কেট থানা পরিদর্শন করেন। এরপর নিউমার্কেট থানা থেকে শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, মগবাজার, হাতিরঝিল, পুলিশ প্লাজা হয়ে গুলশান থানা ঘুরে দেখেন। এছাড়া তিনি পথিমধ্যে বিভিন্ন অলিগলির নিরাপত্তা পরিস্থিতিও সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিকনির্দেশনা

পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বিভিন্ন থানার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও চেকপোস্টে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন এবং যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “রাজধানীতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে টহল জোরদার করতে হবে এবং সন্দেহভাজন যেকোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিশেষভাবে থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নাগরিকদের অভিযোগ শুনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন এবং বলেন, “জনগণের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ বজায় রাখতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আশ্বস্ত থাকে।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর মনোভাব

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এ জন্য প্রতিটি থানা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটকে নিয়মিত তদারকির আওতায় রাখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গুলশান থানার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে ইউনাইটেড হাসপাতাল হয়ে বারিধারার বাসায় ফেরেন।

১১

Zakaria, 1:00 PM
পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলো ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। নতুন করে তেহরানের ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের একদিন পর, মঙ্গলবার তিনি এই কঠোর অবস্থান জানান।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জাতীয় তেল সংস্থার প্রধানসহ দেশটির তেল বিক্রি ও পরিবহনে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০টিরও বেশি জাহাজ ও বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। এর ঠিক পরের দিনই আরাঘচি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে এই ইস্যুতে কোনো আলোচনা হবে না।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ইরানের প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি অব্যাহত রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো দেওয়া হয়েছে। তবে এই চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে রাজি নয় তেহরান।

মঙ্গলবার ইরান সফরে আসেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তেহরানে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আব্বাস আরাঘচি বলেন, “পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার কোনও সম্ভাবনা নেই। যতক্ষণ না মার্কিন প্রশাসন তাদের চাপের নীতি থেকে সরে আসে, ততক্ষণ আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না।’’

তিনি আরও বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, হুমকি, চাপ কিংবা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আমরা কোনো আলোচনা করব না।’’

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তেহরান সফর

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের এই সফর কূটনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ইরানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) নিয়ে আলোচনা করতেই তিনি তেহরানে এসেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল ইরান। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক উত্তপ্ত রয়েছে, যা সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

(সূত্র: রয়টার্স)

১২

জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠি পেলেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চিঠিতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে চলমান সংস্কারের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মঙ্গলবার চিঠিটি প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়।

এর আগে, ৪ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ মহাসচিবকে একটি চিঠি পাঠান ড. ইউনূস, যা ৭ ফেব্রুয়ারি তার রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি খলিলুর রহমানের মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারই প্রতিক্রিয়ায় ২৫ ফেব্রুয়ারি আন্তোনিও গুতেরেস আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠির মাধ্যমে জবাব দেন।

রোহিঙ্গা সংকট ও জাতিসংঘের অবস্থান

চিঠিতে গুতেরেস বলেন, “বাংলাদেশ ও ওই অঞ্চলে রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব নিয়ে আপনার উদ্বেগ আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি। রাখাইনে ক্রমবর্ধমান মানবিক পরিস্থিতি নিয়েও আমি একমত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ যে বিশাল দায়িত্ব পালন করছে, তার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে আসিয়ানসহ আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ। বিশেষ করে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

মানবিক সহায়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

জাতিসংঘ মহাসচিব জানান, রাখাইনের জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তা ও জীবিকার উন্নয়নে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমগুলোকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের স্থানীয় দলগুলোকে এ সংক্রান্ত কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, “রাখাইন এবং সমগ্র মিয়ানমারের দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের কাছে নিরাপদ, টেকসই ও বাধাহীন মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে জাতিসংঘ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করবে।”

চিঠির শেষ অংশে মহাসচিব উল্লেখ করেন, আসন্ন উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রতি বিশ্বব্যাপী নতুন করে মনোযোগ আকর্ষিত হবে। সম্মেলনের ফলাফল পর্যালোচনা করে জাতিসংঘ ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করবে।

মার্চে ঢাকা সফরে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব

জাতিসংঘ মহাসচিব আগামী ১৩ মার্চ ঢাকা সফরে আসছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, “পবিত্র রমজান মাসে আমার আসন্ন বাংলাদেশ সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ সংক্রান্ত আলোচনা আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”

বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই চিঠি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ ও সমর্থনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি আরও জোরালো হলো।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ