বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং জাতির জনক শব্দ ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে জনস্বার্থে এই রিটটি দাখিল করেন নরসিংদীর বাসিন্দা আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একজন ব্যক্তির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি কোনো একক ব্যক্তির অর্জন নয়। দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং এর সঙ্গে জড়িত সকল নেতার অবদান তুলে ধরার দাবি জানানো হয়েছে। রিটকারী আরিফুর রহমান দাবি করেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ক অনুযায়ী জাতির জনক শব্দটি পরিবর্তন করে স্বাধীনতার জন্য অবদান রাখা সকল ব্যক্তির সঠিক তালিকা তৈরি করা উচিত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ৯৩ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশে একক ব্যক্তিকে জাতির জনক হিসেবে উল্লেখ করা সঠিক নয়। বরং ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ বা স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠাতাদের তালিকা তৈরি করে এটি পাঠ্যপুস্তক এবং গণমাধ্যমে সঠিকভাবে তুলে ধরা উচিত। রিটে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃতির জন্য যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।
এছাড়াও, রিটে দাবি করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক এবং গণমাধ্যমে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলনের প্রকৃত ভূমিকা যাতে জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
রিটকারী আরিফুর রহমান আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে যে অপূর্ণতা এবং বিকৃতি রয়েছে, তা অবিলম্বে সংশোধন করা জরুরি। এটি নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্য তুলে ধরার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই রিটটি জনস্বার্থে করা হয়েছে বলে রিটকারী দাবি করেন। আদালতে এই রিটের পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।