নিউ অরলিয়েন্সের লুইজিয়ানা শহরে নববর্ষের সকালে শামসুদ-দীন জব্বার নামে একজন ৪২ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিকের ট্রাক হামলায় ১৫ জন নিহত এবং ডজনখানেক মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে, এফবিআই জানিয়েছে যে, জব্বারের ট্রাকে আইএসআইএসের একটি পতাকা পাওয়া গেছে এবং তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্ট কিছু পোস্ট দেখা গেছে। তবে এ তথ্যই কি প্রমাণ করে যে তিনি একজন সন্ত্রাসবাদী? নাকি তার ব্যক্তিগত জীবনের সংকট এবং মানসিক অবস্থাই এই ঘটনার জন্য দায়ী?
জব্বার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক সেনাসদস্য, যিনি ১৩ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন এবং আফগানিস্তানে সময় কাটিয়েছেন। ইদানীং তার পারিবারিক জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে; স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন। এ ধরনের মানসিক চাপ তাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে, তা এখনো পর্যালোচনার অপেক্ষায়।
এফবিআই এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি যে, আইএসআইএস জব্বারকে হামলার নির্দেশ দিয়েছে বা তিনি তাদের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়েছেন। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তাকে সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করার প্রবণতা প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ হামলাকারীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই মানসিক স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের দিকে আলোকপাত করা হয়। কিন্তু জব্বারের মতো বাদামি বর্ণের মুসলিমদের ক্ষেত্রে এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় না।
মিডিয়ার একাংশ ইস্যুটিকে সরলীকৃত করে বর্ণবাদী বয়ান তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। ট্রাক হামলার ঘটনাটি আইএসআইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করা, অপর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মুসলিমদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরির ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে, এই বয়ান মুসলিম সম্প্রদায়কে আরও বিচ্ছিন্ন এবং নিরাপত্তাহীন করে তুলতে পারে।
২০১৫ সালে সান বার্নাডিনোর ঘটনার সময়ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে মুসলিমবিরোধী নীতিকে উসকে দেয়। নয়-এগারোর ঘটনার পর ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ক্ষেত্রেও এমন অস্পষ্ট তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল। এসব ঘটনা দেখিয়েছে, তথ্য যাচাই না করে ছড়ানো বয়ান কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
জব্বার কি সত্যিই একজন মৌলবাদী, নাকি তার মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক সংকট তাকে এ ধরনের ভয়াবহ পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করেছে? বিষয়টি আরও তদন্তের দাবি রাখে। সাংবাদিক এবং আইনপ্রণেতাদের উচিত জব্বারের ঘটনা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা এবং কোনো একপাক্ষিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো থেকে বিরত থাকা।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সন্ত্রাসবাদ ও ব্যক্তিগত সংকটের মতো জটিল বিষয়গুলো নিয়ে মিডিয়া এবং সরকারের দায়বদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য যাচাই এবং সঠিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করেই কেবল সত্য উদ্ঘাটন সম্ভব।