বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের পক্ষের কোনো রাজনীতিবিদ কখনও পালিয়ে যান না। তিনি দাবি করেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভয়াবহ দমনপীড়ন, অন্যায় কারাবরণ, শারীরিক অসুস্থতা—সবকিছু সহ্য করেও তিনি দেশ ছাড়েননি। কিন্তু যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাদের শেষ পরিণতি পালিয়ে যাওয়া।
শুক্রবার সকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। সেখানে তিনি দাবি করেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে বিএনপি আজ স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। তবে লড়াই এখানেই শেষ নয়। এখন তাদের লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, দেশের হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে, বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। তবুও বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথ ছাড়েনি। বরং জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর দমনমূলক সরকারকে বিদায় করতে পেরেছে। ৫ আগস্টের পরিণতি প্রমাণ করেছে, ফ্যাসিবাদ টিকতে পারে না, জনগণের শক্তির কাছে স্বৈরাচারকে মাথা নিচু করতেই হয়।
তিনি আরও বলেন, এখন দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। বিগত ১৭ বছরে দেশের রাজনৈতিক শক্তিকে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই প্রথমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে, যেন জনগণ নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাদের সরকার নির্বাচিত করতে পারে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না জাতীয় নির্বাচন আগে হবে—এই বিতর্ক করে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে জাতীয় নির্বাচনই সর্বাগ্রে প্রয়োজন। তিনি বলেন, আজকের তরুণ প্রজন্ম ভোটাধিকারই বুঝতে পারে না। ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সী বহু তরুণ জীবনে একবারও ভোট দিতে পারেনি। কারণ, গত ১৭ বছর ধরে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। এখন জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, তাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য। তাই বিএনপি লড়াই চালিয়ে যাবে।
রিজভী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু ভাষা আন্দোলনের দিন নয়, এটি আমাদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে এরশাদের পতন, সবকিছুতেই ভাষা আন্দোলনের চেতনা কাজ করেছে। আজকের লড়াইও সেই চেতনারই অংশ। জনগণের শক্তির কাছে স্বৈরাচার টিকতে পারে না, সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
এ সময় বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসিরুদ্দিন অসীম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।