ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনলেও এবার হামাসের বিরুদ্ধেই একই ধরনের অভিযোগ তুলেছে তেল আবিব। তারা দাবি করেছে, হামাস যে চারটি মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে, তার একটি কোনো জিম্মির নয় এবং এর পরিচয় অজ্ঞাত।
শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হস্তান্তরিত মৃতদেহগুলোর মধ্যে ছিল ৯ মাস বয়সী কুফির বিবাস ও তার চার বছর বয়সী ভাই অ্যারিয়েলের মরদেহ, তবে তাদের মা শিরি বিবাসের দেহ ফেরত দেওয়া হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী, শিরিসহ চারটি মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও শিরির বদলে যে দেহ দেওয়া হয়েছে, সেটি কোনো জিম্মির সঙ্গেই মেলে না।
এ বিষয়ে বিবিসি ও রয়টার্সের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, “এটি সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের চুক্তি লঙ্ঘন। তারা চারটি নির্দিষ্ট মৃতদেহ ফেরত দিতে বাধ্য ছিল।" ইসরায়েল দাবি করেছে, শিরিসহ জীবিত ও মৃত সব জিম্মিদের ফেরত চাই তারা।
তবে হামাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
ইসরায়েলের অভিযোগের আগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক রেকর্ড করা ভাষণে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এদিকে, মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় ফিলিস্তিনি এক যোদ্ধাকে একটি পোস্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে, যেখানে ইসরায়েলি পতাকায় মোড়ানো কফিনের ছবি দিয়ে লেখা ছিল— “যুদ্ধের প্রত্যাবর্তন = কফিনে তোমাদের বন্দিদের প্রত্যাবর্তন”।
মৃতদেহগুলো হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে "জঘন্য ও ভয়াবহ" বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাঁর মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক বলেন, "আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, মরদেহ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে মৃত ও তার পরিবারের মর্যাদা নিশ্চিত করা উচিত।"
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর পাল্টায় ইসরায়েল দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪৮,০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যা পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
গত মাসের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, হামাস বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো মৃত চার জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করে। এর বদলে ইসরায়েল কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, শনিবার হামাসের আরও ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিকবার চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। তার ওপর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন পরিকল্পনার ঘোষণা দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।