মঙ্গলবার, ১লা জুলাই, ২০২৫| রাত ১২:৩৯

চুইঝালের চাষে লাভবান কুড়িগ্রামের কৃষকরা, দেশজুড়ে বাড়ছে জনপ্রিয়তা

প্রতিবেদক
staffreporter
জুন ২৮, ২০২৫ ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
চুইঝালের চাষে লাভবান কুড়িগ্রামের কৃষকরা, দেশজুড়ে বাড়ছে জনপ্রিয়তা

চুইঝালের চাষে লাভবান কুড়িগ্রামের কৃষকরা, দেশজুড়ে বাড়ছে জনপ্রিয়তা

রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত চুইঝাল এখন অনেকের কাছে ‘জাদু মসলা’ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে গরু, খাসি কিংবা হাঁসের মাংস রান্নায় এর ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জনশ্রুতি রয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নাকি চুইঝালের স্বাদ পছন্দ করতেন। যদিও এই তথ্যের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, তবুও বাঙালির রান্নায় এর ব্যবহার দ্রুতই বিস্তার লাভ করছে।

চুইঝাল একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Piper chaba। এটি পিপারসি পরিবারের অন্তর্গত এবং দেখতে অনেকটা পান পাতার মতো হলেও এর কাণ্ড ও লতায় রয়েছে তীব্র ঝাল স্বাদ এবং একটি স্বতন্ত্র ঘ্রাণ। সাধারণত খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল অঞ্চলে এর ব্যবহার বেশি হলেও এখন কুড়িগ্রামের মতো উত্তরের জেলাতেও এর চাষ শুরু হয়েছে।

কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার মধ্যে রাজারহাট, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারীতে ব্যক্তি উদ্যোগে ব্যাপক হারে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। পরগাছা জাতীয় এই গাছ অন্য গাছের গায়ে উঠিয়ে দিলেই বাড়তি কোনো যত্ন ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাণ্ড মোটা হয় এবং বাজারমূল্যও বাড়ে। পাঁচ বছর বয়সী একটি গাছ দুই থেকে তিন মণ পর্যন্ত হয়, যা প্রতিমণ ৫ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

স্থানীয় কৃষকদের মতে, চুইঝালের চাষে ব্যয় খুবই কম। কোনো জমি আলাদা করে না রেখে বাড়ির অন্যান্য গাছের গোড়ায় লাগালেই তা বেড়ে ওঠে। কেউ কেউ বলছেন, তারা প্রতিবছর ৪০-৫০ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করছেন। ফলে অনেকেই এখন এটি বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা করছেন।

নাগেশ্বরী কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, এ গাছের তেমন পরিচর্যা দরকার হয় না এবং বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অনেক পাইকার কুড়িগ্রামের গ্রামাঞ্চল থেকে চুইঝাল কিনে দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহ করছেন।

চুইঝাল শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, এর রয়েছে নানা ধরনের ওষুধি গুণও। ব্যথা, সর্দি-কাশি ও জ্বর উপশমে এটি কার্যকর। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, এ গাছ নিয়ে আরও গবেষণা করলে কুড়িগ্রামের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করা সম্ভব।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কুড়িগ্রামে এটি এখনও তরকারিতে খুব বেশি ব্যবহৃত না হলেও, অন্যান্য জেলায় বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিভাগ নানা পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছে।

চুইঝালের এ সম্প্রসারণ ও চাষের প্রসার স্থানীয় কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছে। ভবিষ্যতে চুইঝাল কুড়িগ্রামের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি