যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়লেও বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য এতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক খাতের জন্য এটি হতে পারে বড় একটি সুযোগ। তবে এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে হলে ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সরকারের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তেজনার সূচনা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির মাধ্যমে। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় তিনি কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেন, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে। পাল্টা জবাবে কানাডা জানায়, তারা ১৫৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক বসাবে, যা দুই ধাপে কার্যকর করা হবে। একইভাবে চীন ও মেক্সিকোও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়।
তবে শুল্ক আরোপের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর জন্য শুল্ক স্থগিত করেন এবং চীনের সঙ্গেও আলোচনার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ততক্ষণে বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়ে গেছে, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য নতুন বাজার সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-নভেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে ১,৫২২ কোটি ডলারের পোশাক, কানাডা থেকে ৪৭ কোটি ডলারের এবং মেক্সিকো থেকে ২৪১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে এই দেশগুলোর মার্কিন বাজারে প্রবেশ কমে যেতে পারে, যা বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানির জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে সরকারের উচিত দ্রুত নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মো. হাতেম বলেন, “সরকার যদি উপযুক্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তৈরি হওয়া সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব। এজন্য আমাদের সময়োপযোগী অর্থনৈতিক কৌশল নিতে হবে, যা রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে আরও বেগবান করবে।”
অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে অর্থনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) করার পরামর্শ দিচ্ছেন। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান শুল্ক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে। এই সুযোগে বাংলাদেশকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে, যা ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন এলে সেটি বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। বর্তমান বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে, তবে তা কাজে লাগাতে হলে সরকারের দ্রুত নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।