চার জিম্মির মরদেহ ফেরত, ক্ষমা চাইলেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট
ইসরায়েলের চার নাগরিকের মরদেহ ফেরত পাঠিয়েছে হামাস। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিশ্চিত করেছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালে গাজার খান ইউনিস থেকে শিরি, এরিয়েল, কেফির বিবাস এবং ওদেদ লিফশিটজের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়।
মরদেহগুলো বর্তমানে জাফার আবু কবির ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে আনুষ্ঠানিক শনাক্তকরণের জন্য রাখা হয়েছে। ইসরায়েলি সরকার জানিয়েছে, জিম্মিদের পরিবারের প্রতি সম্মান জানাতে এবং তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
হামাস দাবি করেছে, নিহতদের বাঁচিয়ে রাখতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইসরায়েলি হামলার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, হামাসের হেফাজতে থাকা অবস্থায় এদের মৃত্যু হয়েছে এবং এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে ফিলিস্তিনি সংগঠনটিই দায়ী।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ নিহতদের স্মরণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মরণোত্তর ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে তিনি লিখেছেন, “ব্যথিত, আর কিছু বলার নেই। আমরা গোটা জাতি আজ শোকে বিহ্বল।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমি মাথা নিচু করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সেই ভয়ঙ্কর দিনে আপনাদের রক্ষা করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আপনাদের নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে না পারার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।”
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বর্তমানে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চলছে। এর মধ্যেই হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের বিনিময়ে সকল জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ইসরায়েল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২৯৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ১১ হাজার ৭৩৩ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার তথ্য দপ্তর এক হালনাগাদে জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০৯-এর বেশি, কারণ অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন।
গাজার কর্তৃপক্ষ আরও অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৫ হাজার ভ্রাম্যমাণ বাড়ি উপত্যকায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য আশ্রয় সংকট সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে বুলডোজারসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তাও আটকে দিচ্ছে আইডিএফ।
এই অবস্থার মধ্যেই বন্দিবিনিময় চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাশেম জানিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত, যার মধ্যে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই পক্ষের এই সমঝোতা প্রক্রিয়া অত্যন্ত নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। ইসরায়েলি জনগণের একাংশ এই যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, কারণ তারা মনে করছে হামাসের ওপর সামরিক চাপ অব্যাহত রাখা দরকার। অন্যদিকে, গাজার সাধারণ জনগণ প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে এবং তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আশা করছে।
বিশ্ব কূটনীতিকরা এই সংঘাত নিরসনে নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছেন। তবে ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই নিজেদের শর্তের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকায় দ্রুত কোনো সমাধান আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় গাজায় মানবিক সংকট আরও প্রকট হচ্ছে এবং সংঘাতের অবসান কবে হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।