সোমবার, ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫| রাত ১:০৪

গোমূত্রের পর এবার বাঘমূত্র! চীনে দেদার বিক্রি, রোগ সারানোর দাবিতে চাঞ্চল্য

প্রতিবেদক
staffreporter
জানুয়ারি ২৯, ২০২৫ ৪:২১ অপরাহ্ণ
গোমূত্রের পর এবার বাঘমূত্র! চীনে দেদার বিক্রি, রোগ সারানোর দাবিতে চাঞ্চল্য

গোমূত্রের পর এবার বাঘমূত্র! চীনে দেদার বিক্রি, রোগ সারানোর দাবিতে চাঞ্চল্য

গোমূত্র নিয়ে ভারতে বিতর্কের রেশ না কাটতেই এবার চীনে বাঘমূত্র বিক্রির খবর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। চীনের একটি চিড়িয়াখানা বোতলজাত বাঘমূত্র বিক্রি করছে, যা বাতব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানার দাবি, এই মূত্র ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে দারুণ কার্যকর। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান।

হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশের ইয়ান বিফেংশিয়া ওয়াইল্ডলাইফ জু নামের একটি চিড়িয়াখানা বাঘমূত্র সংগ্রহ করে বোতলজাত করছে এবং এটি সীমিত পরিমাণে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি বোতলে ২৫০ মিলিলিটার মূত্র রাখা হচ্ছে, যার মূল্য ৫০ ইউয়ান বা প্রায় ৮৪৭ টাকা। চিড়িয়াখানার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দিনে মাত্র দুই বোতল বাঘমূত্র বিক্রি করা হয়, ফলে চাহিদার তুলনায় এটি অনেক কম।

চিড়িয়াখানাটি দাবি করেছে, বাতব্যথা ও গাঁটের ব্যথা সারাতে বাঘমূত্র অত্যন্ত কার্যকর। ব্যথার স্থানে মূত্র প্রয়োগ করলে দ্রুত ব্যথা উপশম হয়। আরও ভালো ফল পেতে বাঘমূত্রের সঙ্গে হোয়াইট ওয়াইন ও আদাকুচি মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় লাগানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এমনকি কেউ চাইলে এটি পানও করতে পারেন বলে জানানো হয়েছে। যদিও মূত্র পান করার ফলে শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

ওই চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাঘরা যে নির্দিষ্ট জায়গায় প্রস্রাব করে, সেখান থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে মূত্র সংগ্রহ করা হয়। এটি প্রক্রিয়াজাত করে বোতলজাত করা হয়, যাতে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। তবে বাঘমূত্রের সরবরাহ সীমিত বলে এর বিক্রিও সীমিত রাখা হয়েছে।

এই খবর প্রকাশের পর চীনের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে বিকল্প ওষুধ হিসেবে স্বাগত জানালেও, অনেকেই এটিকে “বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন ও বন্যপ্রাণী শোষণের নতুন কৌশল” বলে নিন্দা করেছেন। প্রাণী অধিকার সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং চিড়িয়াখানাটির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

ভারতে গোমূত্রের ব্যবহার নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলে আসছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারির সময় গোমূত্রের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। এমনকি, ভারতে ‘গোমূত্র পার্টি’ পর্যন্ত আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে লোকজন একসঙ্গে বসে গোমূত্র পান করত। বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমারও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন, তিনি নিয়মিত গোমূত্র পান করেন। এবার চীনে বাঘমূত্র বিক্রির খবর সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘমূত্রের ওষুধি গুণাগুণ সম্পর্কে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এটি শুধু প্রচলিত বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বিক্রেতারা দাবি করছেন, এটি চীনের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার অংশ এবং বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বাঘমূত্র বিক্রির খবর সামনে আসার পর আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি শুধুই একটি বাণিজ্যিক প্রচার, নাকি সত্যিই কোনো ওষুধি গুণ রয়েছে? যদিও চিকিৎসকরা এ ধরনের বিকল্প চিকিৎসার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তবে ক্রেতারা এটি কিনছেন এবং ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ