গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত প্রস্তাব, সৌদি আরবের প্রত্যাখান
গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করা উচিত এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এই ভূখণ্ডের মালিকানা নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এ সময় দুই নেতা গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় প্রসঙ্গেও আলোচনা করেন।
ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, ফিলিস্তিনিদের গাজায় ফিরে যাওয়া উচিত নয়। তারা তো এখন সেখানে বসবাস করতে পারবে না। তাদের নতুন কোনো জায়গায় পুনর্বাসন করা দরকার। আমরা চাই গাজাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে, যাতে এটি ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেয়ারা’তে পরিণত হয়, যেখানে বিশ্বের যেকোনো মানুষ, এমনকি ফিলিস্তিনিরাও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।”
তবে এই বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থি নেতারা বলছেন, এটি মূলত ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করার একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত। তারা এটিকে ‘জাতিগত নিধনের’ অংশ হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্পের এই প্রস্তাব যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সংকট নিরসনের বদলে নতুন করে সংঘাত উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ট্রাম্পের দাবি, গাজাকে বসবাসের উপযোগী করে তুলতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে এবং এই সময়ের মধ্যে সেখানে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা উচিত। তিনি বলেন, “আমরা যা করা দরকার, তা-ই করবো। গাজাকে জনশূন্য করে সেখানে নতুনভাবে উন্নয়ন ঘটানো হবে, যাতে ভবিষ্যতে সেখানে কোনো সংঘাত না ঘটে।”
তবে এই প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে মিসর ও জর্ডান। গত সপ্তাহেই মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি এবং জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ গাজাবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মতে, গাজা ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি এবং তাদের সেখানেই থাকার অধিকার রয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের অবস্থান আগের মতোই রয়েছে। এটি কোনোভাবেই পরিবর্তন হবে না।” সৌদি আরবের এই ঘোষণার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশও ট্রাম্পের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, এটি ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত, যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে নতুন অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে, যা চলমান যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলবে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সেখানে ১৫ মাসের যুদ্ধের ফলে শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১৮ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের নামে তাদের উচ্ছেদ করে মার্কিন মালিকানার কথা বলা নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরও দুর্বল করে দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।