ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিদিনই ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হচ্ছে লাশ। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ভয়াবহ সংঘাতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। ইতোমধ্যেই নিহতের সংখ্যা ৪৮ হাজার ছাড়িয়েছে। অথচ এমন এক সময়, যখন বিশ্ববাসী যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশায় ছিল, তখনই অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করছে, গাজায় যে নৃশংস যুদ্ধ কৌশল ইসরায়েল ব্যবহার করেছিল, এবার সেটাই পশ্চিম তীরের জেনিনে প্রয়োগ করা হচ্ছে। শহরের বড় অংশ ধ্বংস করে সেখানে ট্যাংক মোতায়েন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইতোমধ্যেই শরণার্থী শিবিরের বড় একটি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, পশ্চিম তীরের হেবরনের দক্ষিণে অবস্থিত ফাওয়ার ক্যাম্পেও অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের।
এদিকে, গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার করা হচ্ছে লাশ। সোমবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৩৫০ জনে। আহত হয়েছেন এক লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ। তবে বাস্তব মৃতের সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি ফিলিস্তিনিদের। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মরদেহ চাপা পড়ে আছে, যাদের হিসাব নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে তিন পর্যায়ের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। চুক্তিতে বন্দি বিনিময়, যুদ্ধ বন্ধ, এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের শর্ত থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। হামাস অভিযোগ করছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করছেন। এদিকে, জাতিসংঘও ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। সংস্থাটির মতে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে গাজার ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসন শুধু গাজা বা পশ্চিম তীরেই সীমাবদ্ধ নেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও চাপে পড়তে শুরু করেছে দেশটি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি জার্মানির নবনির্বাচিত চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যদিও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। আইসিসি জার্মানিকে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গাজা ও পশ্চিম তীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সংঘাতের অবসান এখনো হয়নি। ইসরায়েল একদিকে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে, অন্যদিকে জেনিনে নতুন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে পশ্চিম তীরেও সংঘাত উসকে দিচ্ছে। এই আগ্রাসন কেবল ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগই বাড়াচ্ছে না, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তাকে আরও জটিল করে তুলছে।