গাজায় পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলে চলমান যুদ্ধবিরতি চললেও, গাজায় একের পর এক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসরায়েল গাজায় পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে, এমন তথ্য সামনে এসেছে। ইসরায়েলের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলী পূরণে গাজায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার গাজায় বিদ্যুৎ ও পানি বন্ধ করার বিষয়ে বিবেচনা করছে। ইসরায়েলের মুখপাত্র ওমর দোস্ত্রি বলেছেন, “হামাস যত বেশি দিন এটি প্রত্যাখ্যান করবে, ইসরায়েল তত বেশি সুযোগ পাবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে এমন কিছু পদক্ষেপ রয়েছে, যার মধ্যে যুদ্ধবিরতি পুনরায় ভঙ্গের সম্ভাবনা রয়েছে এবং গাজায় পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।”
ইসরায়েলি মুখপাত্র আরও বলেন, ইসরায়েল এই পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করছে এবং বন্দিদের ফেরত আনার সুযোগ তৈরি করতে চায়। তবে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজায় দ্বিতীয় পর্যায়ের বন্দি বিনিময় চুক্তি আলোচনায় যেতে অস্বীকার করেছেন এবং তিনি চাচ্ছেন প্রথম ধাপটি আরও বাড়াতে।
গাজার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাস এমন কোনও শর্তে আলোচনা করতে রাজি হয়নি এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। ইসরায়েলি সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ‘কান’ থেকে জানা গেছে, ইসরায়েল এক সপ্তাহের মধ্যে গাজার বিরুদ্ধে আরও কঠোর কৌশল প্রয়োগ করতে পারে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ বন্ধ করা, সেনা অভিযানের সংখ্যা বাড়ানো এবং উত্তর গাজার ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে স্থানান্তরের মতো পদক্ষেপ রয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও, ইসরায়েল গাজার ওপর নিরলস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের ফলে গাজার প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মতে, এই আক্রমণের ফলে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, এবং গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ছে।