গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৪২ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরও ৪২ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই নতুন সংযোজনের ফলে গাজার মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার ৫০০-তে পৌঁছে গেছে। দীর্ঘ ১৫ মাসেরও বেশি সময় পর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রতিদিনই একের পর এক লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে, যা প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা গাজার বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরও ৪২টি মরদেহ উদ্ধার করেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৪৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আহত আরও ৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যার ফলে ইসরায়েলি হামলায় আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৫৮০-তে পৌঁছেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন কিংবা রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে ধ্বংসস্তূপের গভীরে আটকে পড়া অনেকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময়, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে বাস্তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও মৃতদেহ উদ্ধারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায়, গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির চিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ইসরায়েলের হামলার বর্বরতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, এখনো ১১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এদের অনেকেই হয়তো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘ বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে গেছে, যা ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়েছে।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া পুরো ভূখণ্ডটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা এতটাই প্রকট যে, ইসরায়েলকে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও দেশগুলো গাজায় এই মানবিক সংকটের দ্রুত সমাধান চাইলেও, যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলের পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে প্রতিদিন লাশ উদ্ধারের ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় আরও প্রকট হচ্ছে। গাজার সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রা ধ্বংসস্তূপ আর ভয়াবহতার মাঝে কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।