গাজায় একদিনেই নিহত আরও ৮৬ ফিলিস্তিনি, সহায়তা পয়েন্টে গুলিবিদ্ধ অর্ধশতাধিক
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একদিনেই ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। মঙ্গলবার (২৫ জুন) ভোর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় কমপক্ষে ৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। নিহতদের মধ্যে ৫৬ জনই ছিলেন ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থী, যারা সহায়তা গ্রহণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রে জড়ো হয়েছিলেন।
স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে চালানো গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। গাজার দক্ষিণাঞ্চল রাফাহতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন। এছাড়া গাজার মধ্যাঞ্চলে সালাহ আল-দীন সড়কে সহায়তা নিতে আসা মানুষদের ওপর হামলায় আরও ২৫ জন নিহত এবং ১৪০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই হামলাগুলোর বেশিরভাগ ঘটেছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সহায়তা বিতরণ পয়েন্টের আশেপাশে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এসব পয়েন্টকে অভিহিত করেছে “মৃত্যু ফাঁদ” হিসেবে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মৃতদেহ নিয়ে আসা হচ্ছে আল-আওদা হাসপাতালে, যা নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের পাশে অবস্থিত। ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে আল-জাজিরার যাচাইকারী সংস্থা সানাদ। একই ধরনের হৃদয়বিদারক চিত্র দেখা গেছে খান ইউনুসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সেও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণ-আসার আগে থেকেই অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী আহমেদ হালাওয়া বলেন, “এটা ছিল গণহত্যা। আমরা পালাতে চেষ্টা করছিলাম, তখনও ট্যাংক আর ড্রোন থেকে গুলি চলছিল।”
গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, “আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ রক্তে ভেসে গিয়েছিল, চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই মারা গেছেন।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তাদের দাবি, সহায়তা কেন্দ্রে কিছু “সন্দেহভাজন” ব্যক্তি ঘনিষ্ঠভাবে আসায় তারা প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়। তবে মানবিক সংস্থাগুলোর বক্তব্য, এসব হামলার অধিকাংশই কোনো সতর্কতা ছাড়াই করা হয়।
এদিকে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, “মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে শুধুমাত্র খাদ্য পাওয়ার চেষ্টা করার জন্য। সহায়তার নামে পরিচালিত এই সামরিকীকৃত বিতরণ ব্যবস্থা মানবিকতার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করে না।” তিনি আরও বলেন, “উভয় পক্ষের নেতাদের এখনই রাজনৈতিক সাহস দেখিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।”
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন। বিশ্বজুড়ে এই মানবিক বিপর্যয়ের নিন্দা ও উদ্বেগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে।