গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত অধিবাসীদের মিসর ও জর্ডানে পুনর্বাসনের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবকে সরাসরি অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। মঙ্গলবার বার্লিনে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অন্য দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শলৎজ বলেন, "গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর বা জর্ডানে পাঠানোর প্রস্তাব এক কথায় নাকচ করে দেওয়া উচিত। এটি কোনো সমাধান হতে পারে না। ফিলিস্তিন সংকটের একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান হলো দুই রাষ্ট্র নীতি।"
তিনি মনে করিয়ে দেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে দুই পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে টিকিয়ে রাখাই একমাত্র বাস্তব ও ন্যায়সংগত পথ। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে হবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি), কোনো বিদেশি শক্তিকে নয়।
টানা ১৫ মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। চ্যান্সেলর শলৎজ মনে করেন, এই যুদ্ধবিরতি শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া উচিত নয়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, "শান্তি তখনই সম্ভব, যখন গাজার মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে আশাবাদী হতে পারবে।"
ট্রাম্পের প্রস্তাব ইতোমধ্যেই কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে মিসর ও জর্ডান উভয় দেশই। জর্ডানে আগে থেকেই লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শরণার্থী বাস করছেন, আর মিসরেও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু রয়েছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে মূলত গাজাবাসীকে তাদের নিজভূমি থেকে উচ্ছেদের একটি চক্রান্ত বলেই মনে করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
তবে সমালোচকদের মতে, জার্মানির এই অবস্থান কিছুটা দ্বৈত নীতিরই প্রতিফলন। কারণ, জার্মানি ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর একটি। ২০২৩ সালে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বার্লিন ইসরায়েলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি প্রায় দশগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জার্মানির কূটনৈতিক অবস্থান কতটা নিরপেক্ষ, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।