জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) কর্তৃক প্রকাশিত গণহত্যার প্রতিবেদন নিয়ে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম জানিয়েছেন, তিনি এই প্রতিবেদন তৈরির শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং বিশ্ব দরবারে আওয়ামী লীগের নৃশংসতার দলিল প্রমাণিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী গণহত্যা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, আধুনিক ইতিহাসে এটি একটি কালো অধ্যায়।”
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমন করতে গিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, নির্যাতন চালিয়েছে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হয়েছে। এই গণহত্যায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং হাজারো মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। সাদিক কায়েম বলেন, "এই নৃশংসতার দলিল জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।"
সাদিক কায়েম জানান, এই প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে তিনি শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন এবং এতে সকল স্টেকহোল্ডার যথাসম্ভব সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, “এ কাজের অভিজ্ঞতায় আমি উপলব্ধি করেছি যে, জুলাইয়ের গণআন্দোলন কত ব্যাপক ছিল এবং কত মানুষের শাহাদাত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে এটি গড়ে উঠেছিল।”
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ছিল এবং এতে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। গণ-অভ্যুত্থানে জড়িত কেউই অসহযোগিতা করেননি বরং ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও প্রমাণ সরবরাহ করেছেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের এই গণহত্যার দায় নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের হতে পারে।
সাদিক কায়েম বলেন, “এই রিপোর্টকে দল-মত নির্বিশেষে সকল ফ্যাসিবিরোধী শক্তিকে বহির্বিশ্বে প্রচার করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে কেউ যেন তথ্য বিকৃত না করে, বরং সকলেই একসঙ্গে জুলাই গণহত্যার বিচার দাবিতে সরব হই।”
বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপও আসতে পারে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নেয় এবং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়।