জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে অন্যতম হলো যাত্রাবাড়ীর এসি তানজিল আহমেদ। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ীতে কলেজ ছাত্র ইমাম হোসেন তাইমের হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, গাজীপুরের কোনাবাড়ি ও উত্তরার দুটি পৃথক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই পুলিশ কনস্টেবলকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই মামলায় যাত্রাবাড়ীর এসি তানজিল আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, কারণ তার নির্দেশনায় এবং সহায়তায় পুলিশ বিভাগের কিছু সদস্যের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ ইমাম হোসেন তাইম হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ইমাম হোসেন তাইম, একজন তরুণ ছাত্র, যিনি আন্দোলনকর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তার মৃত্যু পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। তার হত্যার পেছনে পুলিশের গোপন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠে, যা এই মামলার কেন্দ্রবিন্দু।
অন্যদিকে, গাজীপুরের কোনাবাড়িতে হৃদয় নামক এক যুবক হত্যার ঘটনার পেছনেও পুলিশের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ কনস্টেবল আকরাম হোসেন, যাকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে, তাকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে।
তাছাড়া, উত্তরার একটি হত্যাকাণ্ডেও পুলিশের আরেক কনস্টেবল হোসেন আলীকে দায়ী করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা এবং প্রমাণ হিসেবে পুলিশের কিছু অস্বাভাবিক আচরণের তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আজকের এই শুনানি, যেখানে এসি তানজিল আহমেদ এবং দুই পুলিশ কনস্টেবলকে দায়ী করা হয়েছে, তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশের অপ্রত্যাশিত এবং অগণতান্ত্রিক ভূমিকার একটি বড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মামলার প্রতিটি ধাপে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলির যথাযথ বিচার করবে এবং অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়াম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন, এই মামলার বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
এই মামলার ফলাফল শুধু পুলিশের মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়বে না, বরং এর মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।