ক্ষমতার দাপটে হত্যাসহ ১৬ মামলায় দায়মুক্ত হন হাসিনা
গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক মামলায় দায়মুক্তি পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে খুন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অভিযোগ। এক-দুটি নয়, মোট ১৬টি মামলা ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, যার মধ্যে রয়েছে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে সংঘটিত লগি-বৈঠার হত্যাকাণ্ডের মামলা। এসব মামলার মধ্যে একটিতেও বিচার হয়নি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, এবং ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পান।
২০০১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যাসহ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির ১৬টি মামলা দায়ের হয়। তদন্তে কিছু মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও, এসব মামলা থেকে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ২০০৮ সালে মঈন-ফখরুদ্দিনদের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়ার পর ক্ষমতায় এসে তিনি সকল মামলায় দায়মুক্তি পান।
আইন বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহারকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা সাধারণ মানুষের আইনের প্রতি আস্থা নষ্ট করে এবং অপরাধকে উৎসাহিত করতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এসব মামলা পুনরায় বিচার করা সম্ভব। মামলার মধ্যে ২০০৬ সালের পল্টন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অন্যতম, যেখানে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের ছয় নেতাকর্মীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তদন্তের পর আদালত শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে, তবে ক্ষমতার প্রভাবে এসব মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলি এখনও আশা করছে যে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুমের বাবা বলেছেন, তিনি ৪০ বছর পরও নিজের ছেলের হত্যার বিচার দেখতে চান। তার মতোই, নিহত সিপনের পরিবারও বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মামলা বন্ধ রয়েছে। মামলার আইনজীবী মো. আবদুর রাজ্জাক জানালেন, মামলা পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং উচ্চ আদালতে পুনরায় সুযোগ পাওয়ার আশা রয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও ১০টি মামলা ছিল, যেগুলোর অধিকাংশই হাইকোর্ট থেকে বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালের বেপজায় পরামর্শক নিয়োগ ও মেঘনা ঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের জন্য দায়ের করা মামলা ছিল। এসব মামলায় তদন্ত সংস্থা দুদক প্রতিবেদন দিলেও, মামলার কার্যক্রম কখনও শেষ হয়নি।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে দায়মুক্তি নেওয়া, অপরাধীদের উৎসাহিত করে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্যদের অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।