জাতীয় ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার কোচিং দক্ষতা নিয়ে দেশের ফুটবলাঙ্গনে চলছে তীব্র সমালোচনা। সাবেক ফুটবলার, সংগঠক, এমনকি সাধারণ সমর্থকরাও কোচের পারফরম্যান্সে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি ক্যাবরেরা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে হামজা ও সামিতের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরও তাদের উপযুক্ত ব্যবহারে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে কোচের বিরুদ্ধে।
এই প্রেক্ষাপটেই গতকাল বাফুফের এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাহী সদস্য এবং জাতীয় দল কমিটির সদস্য সাখওয়াত হোসেন ভূইয়া শাহীন প্রকাশ্যে ক্যাবরেরার পদত্যাগ দাবি করেন। যদিও তাঁর এই মন্তব্য দেশের ফুটবল সমর্থকদের সমর্থন পেয়েছে, তবে একজন নির্বাহী সদস্য হিসেবে প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বাফুফের আচরণ বিধি অনুযায়ী, এমন বিষয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বা সভাপতির দৃষ্টিগোচর করে তোলা উচিত ছিল। সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে সরাসরি কোচের পদত্যাগ চাওয়াকে বাফুফের জন্য বিব্রতকর বলে মনে করছেন অনেকেই।
আচরণ বিধি বা কোড অব কন্ডাক্ট নিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে। ২০১৩ সালে বাফুফে একটি লিখিত কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়ন করে, যেখানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে—কোনো বিষয়ে মন্তব্য বা সমালোচনা করার আগে তা সভাপতি বা নির্বাহী কমিটিকে জানাতে হবে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে কিছু বলা যাবে না। ২০২০ সালের নির্বাচনের পরও সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে কোড অব কন্ডাক্টে সম্মতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনের সাত মাস পার হয়ে গেলেও অনেক সদস্য জানেন না আচরণ বিধি সংক্রান্ত বিষয়টি, কেউ কেউ আবার জানান কোনো লিখিত নির্দেশনা বা স্বাক্ষরও দিতে হয়নি।
এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে অন্য দুই সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ ও টিপু সুলতানের আগের বক্তব্য নিয়েও। নারী দলের কোচ পিটার বাটলারকে নিয়ে মেয়েদের অসন্তোষের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন কিরণ, যা ছিল গোপনীয়তা ভঙ্গের শামিল। একইভাবে রেফারিং নিয়ে টিপু সুলতান বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, যা এক নির্বাহী সদস্য হিসেবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের উদাহরণ। এসব ঘটনায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ অতীতে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানকে মিডিয়ায় মন্তব্যের জন্য শোকজ করা হয়েছিল। ২০২০-২৪ মেয়াদে আরো দু’জন সদস্যকেও শোকজ বা সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছিল।
এবারের কমিটিতে এমন দৃষ্টান্ত না থাকায় নির্বাহী সদস্যদের মন্তব্যের সীমা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ স্ট্যান্ডিং কমিটির ফরমে কিছু মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনার কথা বললেও সর্বশেষ কোন কোড অব কন্ডাক্ট প্রযোজ্য তা নিশ্চিত নয়। সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি তাবিথ আউয়াল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, এসব বিষয় তারা পরিপূর্ণভাবে নিরসনের উদ্যোগ নেবেন। তবে এখনই প্রয়োজন, আচরণবিধি বিষয়টি পরিষ্কারভাবে সামনে আনা এবং সদস্যদের তার প্রতি সচেতন ও দায়বদ্ধ করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আর না ঘটে।