মঙ্গলবার, ১লা জুলাই, ২০২৫| রাত ১২:৪০

কোয়ান্টাম নেতৃত্বের পথে যুক্তরাজ্য, ৫০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ ঘোষণা

প্রতিবেদক
staffreporter
জুন ২৫, ২০২৫ ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ
কোয়ান্টাম নেতৃত্বের পথে যুক্তরাজ্য, ৫০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ ঘোষণা

কোয়ান্টাম নেতৃত্বের পথে যুক্তরাজ্য, ৫০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ ঘোষণা

ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তিতে ৫০ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৬৩ কোটি ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। কোয়ান্টাম ফিজিক্সভিত্তিক এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে ঘিরে ব্রিটেনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখন স্পষ্ট—বিশ্বের শীর্ষ কোয়ান্টাম শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কেবল অত্যন্ত দ্রুত গণনার সুবিধা নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে আমূল পরিবর্তন আনবে। কোয়ান্টাম প্রযুক্তির সাহায্যে সুপার কম্পিউটারের চেয়েও শক্তিশালী বিশ্লেষণ, সাইবার নিরাপত্তায় উন্নত এনক্রিপশন, জটিল রোগের সূচনাপর্বে শনাক্তকরণ, এমনকি উন্নত ওষুধ উদ্ভাবনের সম্ভাবনা উন্মোচিত হচ্ছে।

ব্রিটেনের ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্সের প্রধান নির্বাহী টম গ্রিনিয়ার বলেন, “কোয়ান্টাম প্রযুক্তি মানবজাতির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টারনেটের মতোই একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারে পরিণত হতে যাচ্ছে।”

এর আগে ২০২৩ সালে কনজারভেটিভ সরকার এক দশকে ২৫০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও তার বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু নতুন লেবার সরকার ক্ষমতায় এসে সেই পরিকল্পনার পর্যালোচনা শেষে এবার তা এগিয়ে নিচ্ছে আরও স্পষ্ট অঙ্গীকার ও সমর্থন নিয়ে।

অক্সফোর্ড কোয়ান্টাম সার্কিটসের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহী জেরাল্ড মুল্যালি বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য নিজস্ব কোয়ান্টাম সক্ষমতা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।” তিনি বলেন, এ প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ছাড়া ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বিনিয়োগ কেবল গবেষণায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ব্রিটেনের স্টার্টআপ ও উদ্ভাবন প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয়তা রক্ষা করতেও সহায়ক হবে। সম্প্রতি অক্সফোর্ড আয়নিকস ও ইনস্ট্রুমেন্টসের কোয়ান্টাম ইউনিট যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ায় গবেষণাগারগুলো বিদেশি মালিকানায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা আরও জোরালো হয়, যা এই বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তোলে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ব্যবহার বিভিন্ন খাতে শুরু হয়েছে। যেমন: কোয়ান্টাম সেন্সরের সাহায্যে লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড রেল চলাচল আরও নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণের চেষ্টা চলছে। কোয়ান্টাম ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিমেনশিয়ার মতো রোগ শনাক্ত করার কাজ চলছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস, চিকিৎসা, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার বিস্তৃত হচ্ছে।

বিজ্ঞানমন্ত্রী লর্ড প্যাট্রিক ভ্যালান্স ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, দেশের উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বিদেশি কোম্পানির অধীনে না গিয়ে নিজস্ব পরিচয়ে গড়ে উঠতে পারে, সেজন্য সরকার নীতি সহায়তা ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করবে।

যদিও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এখনও বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে, তবুও যুক্তরাজ্যের এই উদ্যোগ বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় দেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। একইসঙ্গে এই বিনিয়োগ প্রমাণ করে—কেবল বেসরকারি করপোরেশন নয়, রাষ্ট্রগুলোও এখন ভবিষ্যতের প্রযুক্তির মালিকানা নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি