সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করেছিল। সে সময় ব্যবসায়ীদের কোনো মর্যাদা ছিল না। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার ২৩ নভেম্বর ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত এ সেমিনারের বিষয় ছিল দেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট সমাধানের উপায়।
অনুষ্ঠানে শেখ বশিরউদ্দীন জানান, বিগত সরকারের সময়ে গ্যাস সংযোগ পেতে তাকে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। সে সময় বৃষ্টির মধ্যে ওনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল, যেন কোনো চাকরি চাইতে গিয়েছি। অথচ আমি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছি, কিন্তু গ্যাস সংযোগ পাচ্ছিলাম না।”
তিনি আরও বলেন, “বৃষ্টিতে ভিজে অনেক কষ্টে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। পরে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল, কিন্তু সেসব কথার সঙ্গে নিজের জ্ঞান মেলাতে পারিনি। তারপরও বাধ্য হয়ে শুনেছি, তখন ব্যবসায়ী হিসেবে ন্যূনতম সম্মানও পাইনি।”
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এখন পরিস্থিতি বদলেছে। যথাযথ মর্যাদার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আপনারা এগিয়ে আসুন। সব কাজ সরকার একা করতে পারবে না। নিজেদের টাকা নিজেরা কাজে লাগান। অতীতে প্রভাবশালীদের অনেক টাকা দিতে হয়েছে, যার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি নেই।”
তিনি বলেন, “বিগত সরকার আমলে আমরা এমন এক বিচারহীনতা ও স্বজনতোষী পরিবেশের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, যেখানে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ছিল না। আমাদের মেপে কথা বলতে হতো এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রভাবশালীদের প্রশংসা করতে হতো। এমন সব কথাবার্তা শুনতে হতো, যা আমাদের মনকে আঘাত করত।”
শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, “জ্বালানি খাত ছিল দুর্নীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর কিছু আর্থিক অপরাধীর সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে অবাক হতে হয়।”
তিনি মনে করেন, বর্তমান জ্বালানি সংকট কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বর্তমান সরকারের বাস্তবতা মেনে চলার প্রবণতা রয়েছে এবং সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ বশিরউদ্দীন। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা এবং প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।