কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় যুবদল সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওই যুবদল নেতা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছিলেন, যা তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
গত ৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে করিমগঞ্জ বাজারে যুবদল সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম স্থানীয় একটি দোকানে চাঁদা আদায় করতে যান। ব্যবসায়ীরা পূর্ব থেকেই তার এই কর্মকাণ্ডে বিরক্ত ছিলেন। সেদিন তিনি এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করলে, ব্যবসায়ী তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে রফিকুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসায়ীকে হুমকি দেন। এই ঘটনার পরপরই অন্যান্য ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে রফিকুল ইসলামকে আটক করেন এবং গণপিটুনি দেন।
খবর পেয়ে করিমগঞ্জ থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা আহত রফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পুলিশ জানায়, রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল হান্নান বলেন, "রফিকুল ইসলাম আমাদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করতেন। চাঁদা না দিলে ব্যবসা পরিচালনায় বাধা দিতেন। আমরা অনেকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ আমরা আর সহ্য করতে পারিনি।"
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। জনগণকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।"
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান বলেন, "রফিকুল ইসলামের এই ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরা লজ্জিত। দলের নীতিবিরুদ্ধ কার্যকলাপে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই যুবদল নেতার এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন এবং প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তবে, কেউ কেউ গণপিটুনির ঘটনাকে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেছেন।
কিশোরগঞ্জের এই ঘটনা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার একটি উদাহরণ। এটি প্রমাণ করে যে, জনগণ আর এই ধরনের অপরাধ মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তবে, আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে প্রশাসনের সহায়তা নেওয়াই সর্বোত্তম পন্থা। প্রশাসনের উচিত এই ধরনের অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।