কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত উত্তর আমেরিকার দুই প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্কে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প প্রথমবারের মতো এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার ও মাদক পাচার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ট্রাম্প এই শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করেন। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর নতুন করে শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা এলো।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই আমদানি শুল্ক কানাডা ও মেক্সিকোকে অবৈধ মাদক ও অভিবাসন প্রবাহ বন্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে চাই। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ মাদক এবং অপরাধী অভিবাসীদের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। এই শুল্ক তাদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা।”
এদিকে মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপরও নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। বর্তমানে চীনা পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে, যা আরও বাড়ানো হতে পারে। চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল পাচার রোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি।
ট্রাম্পের এই শুল্ক ঘোষণার পরই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ তৈরি করবে এবং বাণিজ্য যুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু করবে।
কানাডা ও মেক্সিকো দুই দেশই ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করেছে এবং প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “আমাদের অর্থনীতি রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা তা করবো। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে।”
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমও একই ধরনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাব, তবে আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, গত মাসে কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়েছিল, যেখানে তারা সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার ও মাদক পাচার রোধে পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছিল। এর অংশ হিসেবে, কানাডা একজন “ফেন্টানিল জার” নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং মেক্সিকো সীমান্তে অতিরিক্ত ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েনের ঘোষণা দেয়।
এই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই ট্রাম্প শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত করেন। তবে সেই সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি নতুন করে শুল্ক কার্যকর করার ঘোষণা দিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে আমেরিকান ভোক্তারা বিভিন্ন পণ্যের উচ্চ মূল্যের মুখোমুখি হতে পারেন। কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা যানবাহন, খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তার অন্যতম বড় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার এই নীতি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-মেক্সিকোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এখন দেখার বিষয়, কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় কী ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা নেয় এবং তাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আসে।