জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হতে পারে বলে মত দিয়েছেন নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি দাবি করে তিনি বলেছেন, এ অবস্থায় নির্বাচনের আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। অন্যদিকে, দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ বলেন, “গত ৭ মাসে আমরা আশা করেছিলাম, পুলিশের কার্যক্রম ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বটে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে।”
নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “যখনই নির্বাচন হোক, আমরা অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে এর আগে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি। আমরা যদি এক মাসের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে দ্রুত নির্বাচন করার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকবো। কিন্তু যদি বেশি সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া উচিত।”
নাহিদ আরও জানান, তাদের দল গঠনে বিত্তশালীদের অর্থায়ন রয়েছে, এবং তারা শিগগিরই নতুন অফিসের জন্য ক্রাউডফান্ডিং শুরু করবে। একইসঙ্গে, নির্বাচনের জন্য একটি তহবিল গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
এদিকে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠপর্যায়ে সক্রিয় হচ্ছেন। দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, তারা দেশের সব আসনে যোগ্য প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে চান। রাজধানীর ঢাকা-৯ ও ঢাকা-১১ আসন থেকে এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি শুরু করেছেন।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪, প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী চাঁদপুর-৫ কিংবা ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বরিশাল-৫ কিংবা ঢাকা-১৪ থেকে নির্বাচন করতে পারেন। দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা-৪, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ এবং যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসন থেকে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছেন।
এ ছাড়া কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তরুণ ও যুবকদের সংগঠিত করতে কাজ করছেন। যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার টাঙ্গাইল-৩, আলী নাছের খান গাজীপুর-৪, আবু সাঈদ লিয়ন নীলফামারী-৪, আতাউল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) অথবা ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। যুগ্ম সদস্য সচিব হাফেজ আকরাম হোসাইন ঢাকা-১৩ আসনে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছেন।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের একজন জানিয়েছেন, দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যদি সরকার থেকে পদত্যাগ করে দলে যোগ দেন, তাহলে তারা লক্ষ্মীপুর-১ এবং কুমিল্লা-৩ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।
এদিকে, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী-১ অথবা ২ থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সেখানে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী খায়রুল কবীর খোকন এবং আব্দুল মঈন খান থাকায় তিনি কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে পারেন।
অন্যদের মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া-১, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ কুড়িগ্রাম-১, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ঢাকা-১৭, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জ-৪, মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান চুয়াডাঙ্গা-১, মাহিন সরকার সিরাজগঞ্জ-৫, অলিক মৃ টাঙ্গাইল-১, নাজমুল হাসান সোহাগ গাইবান্ধা-৩, গোলাম মর্তুজা সেলিম ঠাকুরগাঁও-৩, মামুন আব্দুল্লাহ তুষার সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে।
এনসিপির নেতারা জানান, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী জোট বা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তারা এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও ভবিষ্যতে জোট গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না দলটি, তবে তারা বলছে, কোনো জোট হলে এনসিপি-ই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
রমজানে ইফতার পার্টির মাধ্যমে জনসংযোগের কাজ শুরু করবে এনসিপি। ঈদের পর থেকে মাঠপর্যায়ে আরও সক্রিয় হবে দলটি এবং প্রত্যেক প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণা চালাবেন। যেসব আসনে বিএনপি ও জামায়াতের হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে, সেগুলোতে বিশেষ কৌশলে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে এনসিপি।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও এনসিপির নেতারা তাদের নির্বাচনী পরিকল্পনায় অটল রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত না হলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন তারা। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এনসিপির সম্ভাবনা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও দলটি নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে মাঠে নেমে পড়েছে।