এস আলমের ব্যাংক হিসাবে আড়াই লাখ কোটি টাকার লেনদেন, কর ফাঁকির অনুসন্ধানে জটিলতা
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লেনদেন জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ এই বিপুল অর্থের মধ্যে ৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা সুদ আয় হলেও তা আয়কর রিটার্নে দেখানো হয়নি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের আয়োজিত এক কর্মশালায় আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে কর ফাঁকির অনুসন্ধানে দেরি হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক ভুল তথ্য দিচ্ছে, আবার কিছু ব্যাংক তথ্য দিতে চাইলেও ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করছে।
সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব বলেন, “বিশ্বের ইতিহাসে মানবসভ্যতা সৃষ্টির পর এত বড় ব্যাংকিং জালিয়াতির নজির নেই। এস আলম গ্রুপের ১০টি কম্পিউটারে সাতজন কর্মকর্তা এক মাস ধরে তথ্য সংকলন করেও কাজ শেষ করতে পারেননি।”
এদিকে, এস আলমের দুই ছেলের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে বলা হয়, তারা এন্টিগুয়া, সাইপ্রাস ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকত্ব নিতে ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন। ব্যাংকের সার্ভার ম্যানিপুলেট করাসহ জালিয়াতির মাধ্যমে তারা ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনবিআর জানায়, ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দেওয়ার নজির পাওয়া গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, এক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হলে ব্যাংক শূন্য লেনদেন দেখায়, অথচ পরে অনুসন্ধানে তার হিসাবে ৩৭৯ কোটি টাকা পাওয়া যায়।
এনবিআর কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, “অলিগার্করা আর ফিরে আসবে না— এই ভরসায় থাকবেন না। ব্যাংকগুলো সহযোগিতা না করলে সেপ্টেম্বর থেকে আইন প্রয়োগ শুরু করা হবে।”
অন্যদিকে, এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, “ব্যাংকের আইনি দায়িত্ব কর বিভাগের চাহিদা অনুসারে তথ্য সরবরাহ করা। যদি তা না করা হয়, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই অনুসন্ধান কেবল এস আলম গ্রুপের নয়, পুরো ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হতে পারে।