রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে গঠনতান্ত্রিক সংস্কার ও জাতীয় ঐকমত্যের লক্ষ্যে চলমান সংলাপকে ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, “রাষ্ট্র গঠনে যে সুযোগ এসেছে তা হেলায় হারানো যাবে না। গত ৫৩ বছরে এমন আলোচনা কখনও হয়নি।”
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার নবম দিনের সংলাপের সূচনাপর্বে ড. আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, সংলাপে মৌলিক ২০টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আজ তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে, জোটগতভাবে এবং অনানুষ্ঠানিক পরিসরে এসব প্রস্তাব নিয়ে আলাপ করছে—এমন খবর কমিশন পাচ্ছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, “সংলাপের মাধ্যমে সব সিদ্ধান্ত এখানে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা দলগুলোর কাছে অনুরোধ করেছি—জোট বা সমমনা সংগঠনের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা দেখছি কিছু অমীমাংসিত বিষয় নিয়েও আপনাদের অবস্থান এখন স্পষ্ট হচ্ছে, পরিণত হচ্ছে।”
তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ের সংলাপ থেকে যেসব বিষয়ে এখনও মতৈক্য আসেনি, সেগুলোই দ্বিতীয় পর্যায়ে উত্থাপন করা হচ্ছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের যুক্তি বুঝতে পারছে, যা দলীয় অবস্থান শক্ত করতে সহায়তা করছে।
বৃহস্পতিবারের আলোচনায় অংশ নেওয়া তিনটি বিষয়ে কোনও একটিতে মতৈক্য হলে তা হবে এক বড় অর্জন বলে উল্লেখ করেন ড. রীয়াজ। তিনি বলেন, “দিন শেষে শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বাইরে এর বাস্তব প্রতিফলন দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা জীবন বাজি রেখে যে সংগ্রাম করেছেন, সেই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমরা আজকের এই জায়গায় এসেছি। তাই সেই আত্মদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, এই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। এবার যদি আমরা ঐক্য গড়তে পারি, তাহলে সেটাই হবে লাখো প্রাণের যথার্থ সম্মান।”
আলোচনার শেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা যদি এই সংলাপকে গুরুত্ব দিই, তাহলে দেশকে একটি দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।”