উসকানিতে প্রভাবিত না হতে সেনাপ্রধানের আহ্বান
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি জনগণ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি উসকানিতে প্রভাবিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ২৪ মার্চ, ২০২৫ তারিখে তিনি এই বক্তব্য দেন, যখন দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেনাপ্রধানের এই আহ্বান এমন এক সময়ে এসেছে, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়ছে, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সেনাবাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কোনো প্রকার উসকানি বা অপতথ্যে প্রভাবিত হবে না।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি সামরিক সমাবেশে বলেন, “আমাদের দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। উসকানি ও মিথ্যা তথ্যে প্রভাবিত হলে আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে পারি।” তিনি সেনাসদস্যদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জনগণের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী কখনো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করবে না। আমাদের কাজ হলো দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা এবং সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, সেনাবাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যা সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এই ধরনের অপতথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য সবাইকে সচেতন করেছেন এবং বলেছেন, “এগুলো আমাদের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা। আমরা এতে কান দেব না।”
সেনাবাহিনীর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের কিছু মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধান জনগণের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “আমরা জনগণের পাশে আছি। কোনো গুজবে কান দিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে। গত কয়েক মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে দেশে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, এবং এই সময়ে সামাজিক অস্থিরতা বা গুজব সেই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে চায় এবং কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে তার এই শান্তিপূর্ণ ও পেশাদারী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। তবে, কিছু বিরোধী মতও দেখা গেছে, যারা মনে করছেন সেনাবাহিনীকে আরও সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক সংকটে হস্তক্ষেপ করা উচিত। তবে, সেনাপ্রধানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে থেকেই কাজ করতে চান।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে সরকারও জনগণকে গুজব ও উসকানির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। সেনাপ্রধানের আহ্বানকে সমর্থন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। এই মুহূর্তে ঐক্য ও শান্তি সবচেয়ে জরুরি।” সব মিলিয়ে, সেনাপ্রধানের এই বার্তা দেশের চলমান সংকটে একটি স্থিতিশীলতার আশ্বাস হিসেবে কাজ করছে।