রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে র্যাবের পোশাক পরা দুর্বৃত্তদের একটি চক্র মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর এক ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিনিধির কাছ থেকে এক কোটি আট লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে ১২ নম্বর সড়কে ঘটনাটি ঘটে। এই ছিনতাইয়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা জনমনে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ জানায়, নগদের ওই প্রতিনিধি প্রতিদিনের কালেকশন জমা দেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে করে ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। পথে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে আসা কয়েকজন ব্যক্তি র্যাবের পোশাকে তাকে থামিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়ির মধ্যেই তার কাছ থেকে টাকাভর্তি ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং পরে তাকে উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে রেখে চলে যায়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মোটরসাইকেল আরোহী ভুক্তভোগীকে লক্ষ্য করে মাইক্রোবাসটি তার পথরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত ব্যক্তিরা নেমে এসে তাকে জোরপূর্বক ধরে ফেলে, এবং কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এসময় আশপাশে উপস্থিত মানুষেরা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আহম্মদ আলী বলেন, "চক্রটি একটি নির্দিষ্ট গাড়িতে করে পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন।"
এদিকে ছিনতাইকারীরা র্যাবের পোশাক পরায় জনমনে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা র্যাব-১-এর কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ছিনতাইকারীরা যদি র্যাব সদস্যও হয়, তবু তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। র্যাব বা পুলিশের পোশাক পরে যারা অপরাধ করছে, তারাও আইনের আওতায় আসবে।"
তিনি আরও জানান, "এই ধরনের অপরাধে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতেই অপরাধী যেই হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।"
ঘটনাটি দেশের আর্থিক লেনদেন নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পরিচয়-ভিত্তিক প্রতারণার বিষয়ে নতুন করে চিন্তার জন্ম দিয়েছে। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দিকে এখন নজর সবার।