ঈদুল আজহা সামনে রেখে ধারালো অস্ত্রের বাজারে চাঙাভাব, দামও বেড়েছে

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশে দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতির বাজারে ব্যাপক চাঙাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোরবানির প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে কামারশালাগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে, যা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় ও বেচাকেনার গতি বাড়ার মধ্য দিয়ে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজার ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের কামারপল্লিগুলোয় টুংটাং শব্দে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহার মতো উপাদান দিয়ে এসব দা, ছুরি ও চাপাতি তৈরি হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি অস্ত্রগুলোর মান ভালো হলেও দাম কিছুটা বেশি। অন্যদিকে, কাঁচা লোহায় তৈরি অস্ত্রের দাম তুলনামূলক কম হলেও মান কিছুটা কম হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের লোহাজাত দ্রব্য— যেমন রেললাইনের লোহা, গাড়ির পাত, অ্যাঙ্গেল, রড প্রভৃতি দিয়েও এসব ধারালো অস্ত্র তৈরি হচ্ছে।

পণ্যের দামের দিক থেকে দেখা গেছে, পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, দা ও বঁটি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চাপাতি ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা এবং পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এখন বিক্রি অনেক বেড়েছে এবং ঈদের আরও কাছাকাছি সময় এলে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা কিছুটা চাপে রয়েছেন। দাম গত বছরের তুলনায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন দোকানিরা।

এদিকে অনেক ক্রেতা পুরোনো দা-বঁটি ধার দিতে কামারের দোকানে ভিড় করছেন। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ধার দেওয়ার জন্য ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকেও অনেকে ছুরি-বঁটি ধার নিচ্ছেন। এই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধার দেওয়ার দামও বাড়ছে।

কারওয়ান বাজার, চকবাজার, মিটফোর্ড, কেরানীগঞ্জসহ দেশের নানা স্থানে কামাররা দিনরাত খেটে লোহা পেটাচ্ছেন। কয়লার চুলায় দাউদাউ আগুন, হাপরের ধোঁয়া আর হাতুড়ির শব্দে কর্মচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে উঠেছে কামারপল্লিগুলো।

রাজশাহীর একজন আলিম মাওলানা ইয়াহহিয়া বলেন, “কোরবানির পশু জবাই ও গোস্ত প্রক্রিয়াজাত করতে ধারালো অস্ত্র অপরিহার্য, এজন্যই ঈদুল আজহায় কামারদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।”

সব মিলিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে শুধু পশু কেনাবেচাই নয়, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন খাত— বিশেষত কামার শিল্প—ও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। মুসলিমদের আত্মত্যাগের এই মহিমাময় ইবাদতের প্রস্তুতিতে লোহার ধারালো অস্ত্র এখন হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।