ইসরায়েল যেভাবে ব্যর্থ হয় পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা তৈরি আটকাতে
ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে এমন অজুহাত দেখিয়ে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দেশটির পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে এবং হুমকি দিয়েছে যে তারা ইরানকে কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সফল হতে দেবে না। এ পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে আরও বিস্তৃত এক কাহিনি, যেখানে পাকিস্তানকেও একই ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের অন্যতম পুরোধা ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খান। ১৯৩৮ সালে জন্ম নেওয়া তিনি জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৭৪ সালে নেদারল্যান্ডসের ইউরেঙ্কো পরমাণু জ্বালানি কোম্পানিতে কাজ করার সময় গোপন তথ্য হাতিয়ে নেন, যা পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য কাজে লাগে।
১৯৭৬ সালে তিনি নেদারল্যান্ডস ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে রাওয়ালপিন্ডিতে গোপনে পারমাণবিক গবেষণাগার গড়ে তোলেন এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের উপাদান আমদানি করেন। পাকিস্তানের সরকারি কারিগরি কার্যক্রমের খবর ছিল সীমিত, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বিষয়টি জানতেন।
১৯৭৯ সালে এই গোপন কার্যক্রম ফাঁস হলে নেদারল্যান্ডসের কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে এবং খানকে গুপ্তচর সংক্রান্ত অভিযোগে অভিযুক্ত করে, যদিও পরে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৮৬ সালের দিকে পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে বেশ এগিয়ে যায়। তবে পাকিস্তানের পারমাণবিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে এক পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল—যাতে তারা যৌথভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাবে। তবে ভারত সেই পরিকল্পনা থেকে সরে যায়।
পাকিস্তানকে পারমাণবিক সাহায্য করেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ু যুদ্ধের সময়। ১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা সফল হওয়ার পর পরই পাকিস্তান তাদের অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়।
আব্দুল কাদের খান শুধু পাকিস্তানকেই নয়, ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছেন, যার কারণে উত্তর কোরিয়া গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৩ সালে লিবিয়ার গাদ্দাফি এই তথ্য ফাঁস করে দেন, যার পর থেকে খান আন্তর্জাতিক আলোচনায় আসেন।
আব্দুল কাদের খান পরবর্তীতে জানান, তিনি পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করে দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন।
এই ঘটনাসমূহ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও গোপনীয়তার এক জটিল চিত্র উপস্থাপন করে, যেখানে বিভিন্ন দেশের স্বার্থের সংঘর্ষ স্পষ্ট।