ইভিএম ছাড়া এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নীতিমালা থেকে বাদ পড়লো ভোটযন্ত্র
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেও বাদ পড়েছে বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। নতুনভাবে জারি করা ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’-এ ইভিএম সংক্রান্ত সমস্ত বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় আর ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ থাকছে না।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা এই নীতিমালায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্তমান কমিশনের প্রধান এএমএম নাসির উদ্দীন। গত ২৬ জুন গেজেট আকারে প্রকাশিত হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় ৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার।
এর আগে ২০২৩ সালের নীতিমালায় ইভিএমের জন্য পৃথক ভোটকক্ষ স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছিল। এবার সেই বিধান একেবারেই বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে স্থানীয় নির্বাচনগুলো কেবল ব্যালট পেপারের মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হবে, যা প্রযুক্তিনির্ভর ভোট পদ্ধতি থেকে এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে প্রায় দেড় লাখ ইভিএম কিনে নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে মাত্র পাঁচ বছর না যেতেই এর মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার মেশিন নষ্ট বা অকেজো হয়ে পড়ে। সেগুলো মেরামতের জন্য নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব দিলে সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধও বাতিল করে দেয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পে নতুন অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ইসি নিজেই প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়।
এছাড়া ইভিএম প্রকল্পের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করে। ইসির একাধিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক, যা ইভিএম নিয়ে সন্দেহ ও বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনি কাঠামো থেকেও ইভিএমকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো কমিশন। যদিও পূর্ব পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, স্থানীয় পর্যায়ের কিছু নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে।
এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনেও বড় পরিবর্তন এনেছে ইসি। পূর্বের নিয়মে ডিসি ও ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র স্থাপন হতো। এবার সেই ক্ষমতা জেলা প্রশাসন থেকে প্রত্যাহার করে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের হাতে দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য নীতিগুলো আগের মতোই রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত ইভিএম ব্যবহারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে এবং এক সময় যে প্রযুক্তিকে ভোট গ্রহণের আধুনিক রূপ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল, সেটি এখন ত্যাগ করার পর্যায়ে চলে এসেছে।