আসাদের পতনে বিপদে পড়তে যাচ্ছে ভারত!
সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন বিশ্বজুড়ে একটি ভূরাজনৈতিক সুনামি সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসাদের পতন ভারতকে নানান দিক থেকে চাপে ফেলতে পারে, কারণ এটি ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক কূটনীতির ভারসাম্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।
ইরান, ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র, পশ্চিম এশিয়ার একটি প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে। ইরানের প্রভাব কমে গেলে, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং পাকিস্তানের মতো সুন্নি-প্রধান দেশগুলোর ক্ষমতা বাড়বে। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতবিরোধী অক্ষ শক্তিশালী হতে পারে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশ্বিনী মহাপাত্র বলেছেন, “ইরানের দুর্বলতা সুন্নি আধিপত্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন বাড়াবে, যা ভারতের কৌশলগত স্বার্থের জন্য বিপজ্জনক। এছাড়া মধ্য এশিয়ার বাজারে ভারতের প্রবেশের প্রধান মাধ্যম ইরান। সেখানে চাবাহার বন্দরসহ অন্যান্য প্রকল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে।”
ইরানের সস্তা তেল ও গ্যাস ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত এর পূর্ণ সুবিধা নিতে পারছে না। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান দুর্বল হলে, মধ্যপ্রাচ্যের তেল নির্ভরতা বাড়বে এবং জ্বালানির খরচ বেড়ে যাবে, যা ভারতের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৮৫ লাখ ভারতীয় কাজ করেন। ইরান-সৌদি আরব দ্বন্দ্ব বা ইরানের দুর্বলতা এই অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে তাদের কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে ভারতকে বিশাল সংখ্যক অভিবাসী কর্মী পুনর্বাসিত করতে হবে, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
বিশ্লেষক আফতাব কমল পাশা মনে করেন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা ভারতের জন্য জরুরি। ইরান পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের ভারসাম্য রক্ষাকারী ভূমিকা পালন করে। আমেরিকার ভীতি এবং ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতকে তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান তার বর্তমান সঙ্কট কাটিয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে। তবে এই সময়ে, ভারতকে একটি দক্ষ এবং বাস্তবসম্মত কৌশল গ্রহণ করতে হবে যাতে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা যায়।
আসাদের পতনের প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ভারতের ভূরাজনীতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এবং জ্বালানি উৎসের বহুমুখীকরণে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।