আশুরার আগের দিন জনসমক্ষে হাজির ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি, যুদ্ধকালীন অনুপস্থিতি ঘিরে জল্পনার অবসান
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সরাসরি সংঘর্ষ শুরুর পর প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে দেখা গেল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে। শনিবার (৫ জুলাই) পবিত্র আশুরার আগের দিন তেহরানের ইমাম খোমেইনি মসজিদে আয়োজিত এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। অনুষ্ঠানটি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়, যা দেশজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘর্ষের সময় ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হন, যার পর পাল্টা হামলা চালায় তেহরান। তবে এরপর থেকে ১২ দিন যাবত খামেনি প্রকাশ্যে অনুপস্থিত ছিলেন। কেবল তিনটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন তিনি, যা ঘিরে বিভিন্ন মহলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, খামেনি হয়তো গোপন বাংকারে লুকিয়ে রয়েছেন অথবা স্বাস্থ্যগত কারণে অক্ষম।
তবে এই অনুপস্থিতির অবসান ঘটিয়ে শনিবারের অনুষ্ঠানেই খামেনিকে আবেগময়ভাবে উপস্থিত দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি প্রবীণ শিয়া ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মাহমুদ কারিমিকে অনুরোধ করছেন “ও ইরান” শিরোনামের দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশনের জন্য—যেটি সাম্প্রতিক সংঘর্ষে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এই জনসমক্ষে হাজিরা এসেছে মোহররম মাসের শোকপর্বে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব, বিশেষত শিয়া সম্প্রদায়, ইমাম হোসেইন (রা.)-এর কারবালার আত্মত্যাগ স্মরণ করে। আশুরার আগের দিন এই উপস্থিতি খামেনির রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থান পুনরায় জোরালোভাবে তুলে ধরেছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খামেনির উপস্থিতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। সমর্থকদের অনেককে তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে, যা এই অনুপস্থিতি ঘিরে তৈরি হওয়া উদ্বেগ ও গুজবের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া বলেই মনে করা হচ্ছে।
এর আগে ২৬ জুন খামেনি একটি রেকর্ড করা টিভি বার্তায় বলেছিলেন, “ইরান কখনোই ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না,” যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয় এবং ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা—ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—লক্ষ্য করে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। এই অভিযানে যুক্ত হয় ১২৫টি মার্কিন সামরিক বিমান। ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এই ১২ দিনের যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে।
খামেনির এই জনসমক্ষে উপস্থিতি একদিকে যেমন শিয়া মুসলিমদের ধর্মীয় ঐক্য ও মনোবল দৃঢ় করতে সাহায্য করেছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার অবস্থান আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তার এই দৃশ্যমান প্রত্যাবর্তন অনেক কৌশলগত বার্তাও বহন করছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।