আমি কোনও আলোচনা করব না, আপনার যা ইচ্ছা তাই করুন – ট্রাম্পকে ইরানের প্রেসিডেন্ট
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ইরান কোনো ধরনের হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে না এবং ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি যা খুশি তাই করুন।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে নতুন পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেন। ট্রাম্পের প্রশাসন ২০১৮ সালে পূর্ববর্তী পরমাণু চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করে, যার মধ্যে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, ইরান যদি আলোচনায় না আসে, তবে সামরিক সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “কিছু দাম্ভিক সরকার আলোচনায় বসার জন্য যে চাপাচাপি করছে, তার উদ্দেশ্য সমস্যার সমাধান করা নয় বরং তারা তাদের নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা চাপিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আলোচনায় বসতে চায়। নিঃসন্দেহে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তাদের ইচ্ছাপূরণ করতে দেবে না।”
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা পরমাণু অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে না। তবে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার পর ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তারা তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা করবে না।
ট্রাম্প তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর ইরানের ওপর “সর্বোচ্চ চাপ” প্রয়োগের নীতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইরানের সঙ্গে একটি নতুন পরমাণু চুক্তি করতে তিনি প্রস্তুত, তবে ইরান যদি আলোচনায় না আসে, তবে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করে, সংঘর্ষ এড়াতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সংলাপই সর্বোত্তম পথ।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। উভয় পক্ষের উচিত সংযম প্রদর্শন করে কূটনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া, যাতে সংঘর্ষ এড়িয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি নিশ্চিত করা যায়।