আমলাতন্ত্র নির্ভরতাকে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিজম তৈরি করা হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমলাতন্ত্র নির্ভরতাকে কাজে লাগিয়ে দেশে ফ্যাসিজম তৈরি করা হয়েছে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আমলাদের শক্তিশালী করে অতীতের রেজিমগুলো প্রশাসনিক ক্ষমতাকে অপব্যবহার করেছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমলারা এখন এমন সাহস দেখাচ্ছেন, যা তারা অতীতে প্রশাসনিক মদদে অর্জন করেছেন। এই সাহসিকতা তাদেরকে ফ্যাসিজমে রূপান্তরিত করেছে।” তিনি আরও বলেন, “যাঁরা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে আন্দোলনে নেমেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমলাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে। গণতান্ত্রিক রূপান্তরে সহায়তা করা তাঁদের দায়িত্ব।”
তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রের সংস্কার হলে সবাই ন্যায়বিচার পাবে। তবে আমলাদের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া বিধিগত ও নৈতিকভাবে সঠিক হয়নি। তিনি বলেন, “বিগত রেজিমের কিছু আমলা এখনো বিভিন্নভাবে লুকিয়ে রয়েছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, অতীতে ক্ষমতা হস্তান্তর গণতান্ত্রিকভাবে হয়নি। ভবিষ্যতে যেন তা সুষ্ঠু ও প্রাতিষ্ঠানিক হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, “ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাধান খুঁজতে হবে। জনগণ যে রক্ত দিয়েছে, তা যেন বৃথা না যায়।”
বিদেশনীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্যের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটি একক বিদেশনীতি থাকা জরুরি। প্রতিটি সরকারের আমলে বিদেশনীতির পরিবর্তন দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্নীতিবিষয়ক নীতিতেও ঐক্যের প্রয়োজন।”
সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের আরেক উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেন, সরকার জনগণের কথা শুনছে এবং যৌক্তিক সমালোচনা সরকারকে আরও জবাবদিহিমূলক করে তোলে। তিনি বলেন, “যৌক্তিক সমালোচনা সরকারের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে পারে। সুনির্দিষ্ট সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক পরামর্শ দেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঘন ঘন আলোচনা করলে সরকার জনগণের ভাবনা ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান তরুণ নেতৃত্বের ভূমিকাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, “তরুণদের ক্ষমতায়ন দেশের পরিবর্তনের আলোকবর্তিকা হতে পারে।”
সংলাপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, “ক্ষমতার পরিবর্তনের মানে রাজনীতির সংস্কৃতি পরিবর্তন। বিএনপি ভবিষ্যতে একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়।”
এতে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান, আইনজীবী রোকসানা খন্দকার, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ। সংলাপের সঞ্চালক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ।