আন্তর্ক্ষিপ্ত সংকেত: গভীর মহাকাশ থেকে আসা রহস্যময় বার্তা
বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের গভীর থেকে আসা রহস্যময় সংকেত নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে এমন কিছু সংকেত ধরা পড়েছে, যা প্রকৃতির সাধারণ নিয়মের বাইরে বলে মনে করা হচ্ছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, এটি অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর পাঠানো বার্তা হতে পারে, আবার অনেকে বলছেন, এটি হয়তো প্রাকৃতিক কোনো মহাজাগতিক ঘটনার প্রতিফলন। তবে এ নিয়ে কৌতূহল এবং জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।
১৯৭৭ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির বিখ্যাত “ওয়াও সিগন্যাল” ধরা পড়ার পর থেকেই বিজ্ঞানীরা আরও মনোযোগী হয়ে ওঠেন। এই সংকেতটি এতটাই ব্যতিক্রমী ছিল যে, পর্যবেক্ষক বিজ্ঞানী সঙ্গে সঙ্গে নোটপ্যাডে “Wow!” লিখে ফেলেন, যা পরবর্তীতে এই সংকেতের নাম হয়ে যায়। ৭২ সেকেন্ড ধরে আসা এই সংকেতের উৎস আজও অজানা। বিজ্ঞানীরা বহুবার সেই একই স্থান পর্যবেক্ষণ করলেও আর কখনো তেমন কোনো সংকেত ধরা পড়েনি।
সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা পুনরায় মহাকাশের গভীর থেকে আসা রহস্যময় রেডিও সংকেত শনাক্ত করেছেন। কানাডার চিমে রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ২০১৯ সালে একগুচ্ছ দ্রুত রেডিও বিস্ফোরণ (Fast Radio Bursts – FRBs) শনাক্ত করা হয়, যা নির্দিষ্ট বিরতিতে পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছিল। এ ধরনের সংকেত স্বাভাবিক মহাজাগতিক ঘটনাগুলো থেকে আলাদা। এগুলোর আসল উৎস এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
কিছু গবেষক মনে করেন, এই সংকেত কোনো নিউট্রন তারকা বা ব্ল্যাক হোলের ক্রিয়াকলাপের ফলে সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেকে মনে করেন, অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সভ্যতা হয়তো দূর মহাকাশ থেকে বার্তা পাঠাচ্ছে, যা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি।
এই সংকেতগুলো নিয়ে গবেষণার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্প কাজ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্রেকথ্রু লিসেন প্রকল্প। এটি স্টিফেন হকিং এবং রুশ ধনকুবের ইউরি মিলনারের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণা, যার মূল লক্ষ্য মহাবিশ্বে প্রাণের সম্ভাব্য অস্তিত্ব খুঁজে বের করা।
এখনও পর্যন্ত এই সংকেতগুলোর প্রকৃতি ও উৎস পুরোপুরি জানা না গেলেও বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে। যদি সত্যিই কোনো বুদ্ধিমান সভ্যতা থেকে এই সংকেত এসে থাকে, তবে তা মানবজাতির জন্য এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হতে পারে।