‘আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা’ থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান ড. ইউনূসের

বর্তমান সভ্যতা আত্মবিধ্বংসী উল্লেখ করে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণদের ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন, যা পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। গত শুক্রবার জাপানের টোকিওতে সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমরা যে সভ্যতা তৈরি করছি, তা পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ ধ্বংস, অসম সম্পদ বণ্টন এবং নিছক মুনাফার পেছনে ছুটতে গিয়ে এই ধ্বংস ত্বরান্বিত হচ্ছে।”

ড. ইউনূস তার ‘থ্রি জিরো থিওরি’—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ—ব্যাখ্যা করে বলেন, আজকের অর্থনৈতিক কাঠামোতে মানুষ টিকে থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, “বিশ্বের সম্পদের সিংহভাগ এখন অল্প কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত, যা মানবজাতির জন্য এক অভিশাপ।”

বক্তব্যে তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাঁচজন একত্রিত হয়ে একটি ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ গঠন করতে পারে, যার সদস্যরা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করবে এবং সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন এক পৃথিবী গড়ে তুলবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ এবং বেকারত্ব মোকাবেলায় সৃজনশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “চাকরি মানুষের সৃজনশীলতা দমন করে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই সহজাত সৃজনশীলতা ও উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষমতা আছে।”

ছাত্রদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য ‘সামাজিক ব্যবসা’ ক্লাব গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “একটি নতুন পৃথিবী কল্পনা করো, কারণ কল্পনা তোমাকে নিজেকে উন্মুক্ত করার শক্তি দেয়।” তিনি নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন—কিভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময় পাশের গ্রামের দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে সোকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সুজুকিও এ উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন।