বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে সম্প্রতি জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা সরকার যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়েছে, সে বিষয়টি তুলে ধরেছে সংস্থাটি। তবে জাতিসংঘ স্পষ্ট করেছে যে, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী। ওই সময়ের সহিংসতায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে ১২ শতাংশ শিশু ছিল। আহত হয়েছে হাজারো বেসামরিক নাগরিক, এবং ১১,৭০২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের ১১৪ পৃষ্ঠার এই বিশদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করে, কারণ এটি বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি, বিপুল সংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া, মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে, সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা যেন মানবাধিকার নীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, তা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।