আওয়ামী লীগের গোপন বৈঠকে শাওন ও সোহানা সাবা; রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও সোহানা সাবাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণের অভিযোগেই তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠককে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছিল, যা শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নতুন মোড় নিয়েছে।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি কলকাতার একটি হোটেলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন পলাতক নেতা একটি গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকে সশরীরে ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা। অভিযোগ উঠেছে, এ বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হয় এবং রাষ্ট্রবিরোধী নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলো আসবেই নামক একটি গ্রুপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অভিনেত্রী সোহানা সাবা। তাকে ভারতীয় কূটনীতিক ও বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে গোপন বৈঠকের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে মেহের আফরোজ শাওনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং যাচাই-বাছাই শেষে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাওনের গ্রেপ্তারের পর রাতে ধানমন্ডির আরেকটি বাসা থেকে সোহানা সাবাকেও আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
শাওন ও সাবার এই ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তবে চাঞ্চল্য আরও বাড়ে, যখন জানা যায়, শাওনের গ্রামের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত শাওনের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়রা জানান, এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তবে কে বা কারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, গোপন বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যদের সম্পর্কেও তদন্ত চলছে। সন্দেহভাজন আরও কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে এই গ্রেপ্তারের ঘটনা নতুন এক মোড় তৈরি করবে এবং দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।