আইপিএফ রোগে ভুগেছিলেন জাকির হোসেন, কি এই রোগ
ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস (আইপিএফ) একটি দীর্ঘস্থায়ী, প্রগতিশীল ফুসফুসের রোগ, যা ফুসফুসের নরম অংশগুলো ধ্বংস করে এবং সেখানে ক্ষত সৃষ্টি করে। এর ফলে ফুসফুসের টিস্যু মোটা ও শক্ত হয়ে যায়, যার ফলে ফুসফুসের বাতাসের থলিগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, এবং শ্বাস নেওয়ার সমস্যা শুরু হয়।
এই রোগের কারণে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি স্থায়ীভাবে ফুসফুসের ক্ষতি করে। করোনার পর অনেক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, এমনকি যারা ধূমপান করতেন বা অতীতে করতেন, তারাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
৭৩ বছর বয়সী প্রখ্যাত তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের এই বিরল রোগে ভুগছিলেন এবং ১৬ ডিসেম্বর সান ফ্রান্সিসকোর হাসপাতালে মারা যান। চিকিৎসকরা জানান, পঞ্চাশের উর্ধ্বে ধূমপায়ী পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
আইপিএফ কীভাবে কাজ করে?
আইপিএফ রোগে আক্রান্ত হলে শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুস ঠিকভাবে ফুলতে পারে না, যার ফলে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ ধরনের রোগে ফুসফুসের নমনীয়তা হারাতে শুরু করে এবং শ্বাসযন্ত্রের অ্যালভিয়োলাই শক্ত হয়ে যায়, যা পালমোনারি হাইপারটেনশন এবং শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে এটি হৃদরোগে রূপ নিতে পারে।
আইপিএফের কারণ
এই রোগের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি, তবে পরিবেশ দূষণ, ধূমপান এবং জিনগত ঝুঁকি এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আইপিএফের লক্ষণ
আইপিএফের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট, যা সামান্য হাঁটাচলা বা হালকা শারীরিক কার্যক্রমেও দেখা দিতে পারে। এছাড়া বছরের পর বছর শুকনো কাশি, ক্লান্তি, এবং সাধারণ ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হওয়ার সময় রোগটির প্রকোপ বাড়তে পারে।
চিকিৎসা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা
আইপিএফের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছাড়া এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন, যা একটি ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি। তবে, কিছু ওষুধ রয়েছে যা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া ধীর করতে সাহায্য করতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে এবং কম বয়সীদের জন্য ‘লাং এক্সপ্যানশন এক্সারসাইজ’ কার্যকর হতে পারে।
আইপিএফ ও সিওপিডি
আইপিএফ এবং সিওপিডি দুটি আলাদা ফুসফুসের রোগ হলেও, তারা একসঙ্গে হতে পারে এবং ধূমপায়ীদের মধ্যে এই দুই রোগের আশঙ্কা বেশি থাকে। একই সঙ্গে আক্রান্ত হলে, চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে যায়।