সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশজুড়ে যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে চলছে বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। অভিযানের প্রথম দিনেই গাজীপুর ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘ডেভিল’ যতদিন শেষ না হবে, ততদিন এই অভিযান চলবে।
গাজীপুরে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই সেনাবাহিনী চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি শুরু করে। সাদা পোশাকে মাঠে নামে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরাও। অভিযান পরিচালনা করে এখন পর্যন্ত ৮২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ অভিযান মূলত শুরু হয় শুক্রবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনার পর। শুক্রবার রাতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, ওই বাড়িতে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা হয়েছে। এতে উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে ৩০ জন আহত হন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
অভিযানের প্রথম দিনেই নোয়াখালীর হাতিয়ায় এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। হাতিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিরা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। তাদের কাছ থেকে ছুরি, কুড়াল ও তলোয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন আজাদ।
এই অভিযান নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট সফল হোক।’ তার এই মন্তব্যের পর থেকে অনেকে অভিযানকে সমর্থন জানালেও অনেকে এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন।
সরকার বলছে, এই অভিযান অপরাধীদের দমনের জন্যই পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, “অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যেও এই অভিযান চালানো হচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ফয়সল হোসেন জানিয়েছেন, রোববার প্রেস ব্রিফিং করে অভিযানের বিস্তারিত জানানো হবে। এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, এই অভিযান চলবে যতদিন না পর্যন্ত ‘ডেভিল’ শেষ হয়।
গাজীপুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, "যাদের আটক করা হয়েছে, জনগণ তাদের অপরাধ সম্পর্কে জানে।"
অভিযানের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। রাজধানীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। অভিযান কতদিন চলবে, কতজন আটক হতে পারে, সে বিষয়ে সরকার এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরপাকড় আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।